শুক্রবার | ২৬ জুলাই, ২০২৪ | ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১

বীর মুক্তিযোদ্ধা আকিয়াব হোসেনের দাফন

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরের কৃতী বীর মুক্তিযোদ্ধা আকিয়াব হোসেন (৭৩) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রোববার (৯ জানুয়ারি ২০২২) দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক মেয়েসহ অসংখ্যগুণগ্রাহী রেখে যান। সোমবার (১০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় রামকৃষ্ণপুর ঈদগাহ মাঠে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সন্তোষপুর কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
গত ৩ ডিসেম্বর ২০২১ খুলনাস্থ গণহত্যা-নির্যাতন সংগ্রহশালা ও যাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুনের (মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন) নিকট মুক্তিযুদ্ধের সময় উদ্ধারকৃত পাকিস্তানি বাহিনী নির্যাতনে ব্যবহৃত নিষ্পেশন রোলার (পাইপ), চাবুক ও ধারালো অস্ত্র হস্তান্তর করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আকিয়াব হোসেন ও তাঁর একমাত্র মেয়ে মোছা. লুবনা সুলতানা। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ উদ্ধারকৃত পিস কমিটির ৩০ পৃষ্ঠার সভার বিবরণী দলিল হস্তান্তর করেন।
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধা আকিয়াব হোসেন, আদম আলী, তোফাজ্জল হোসেন, ফরিদুল ইসলাম, মহসিন-উল-হকসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শ্বে মসজিদ সংলগ্ন পিস কমিটির অফিস ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা করেন। এ সময় পিস কমিটির সদস্যরা পালিয়ে গেলে রেজুলেশন বহি ও নির্যাতনের সামগ্রী উদ্ধার করেন।
নাটোরের লালপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে ১৯৪৯ সালের ৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন মো. আকিয়াব হোসেন। পিতা মরহুম দেলোয়ার হোসেন, লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও মাতা মরহুম আনোয়ারা বেগম। স্ত্রী সেলিনা হোসেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান লুবনা সুলতানা।
তিনি লালপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১২ বছর লালপুর কলেজে বিনা বেতনে চাকরী করেন। ১৯৮৪ সালে সুগার কর্পোরেশনে ইক্ষু পরিদর্শক হিসেবে চাকরী শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
তিনি লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়ক (১৯৬৫), ঈশ্বরদী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত জিএস (১৯৬৭-১৯৬৯), লালপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৬৯-১৯৭২), নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি (১৯৭৪-১৯৭৭), নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য (১৯৮৩-১৯৮৮) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক। তিনি ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুড়দুড়িয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং ক্যাম্প গঠন করে পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ৬ দফা, ১১ দফা, ১৯৬৯ আন্দোলন, ১৯৭০ সালের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত মুক্তি সংঘ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি। লালপুর পাবলিক লাইব্রেরির উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা আদম আলী বৃত্তি কমিটির সভাপতি।
তাঁর লেখা লালপুরের মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ও গল্প তিনটি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.