শনিবার | ২৭ জুলাই, ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১

নাটোর-১: নেতৃত্ব ফিরে এলো ঘরে

ইমাম হাসান মুক্তি :
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় আবার নেতৃত্ব শহীদ মমতাজ উদ্দিনের পরিবারে ফিরে এসেছে।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শহীদ মমতাজ উদ্দিন। তাঁর মৃত্যুর পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর সহধর্মিণী শেফালী মমতাজ সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য হন। দশম ও দ্বাদশ সংসদ নির্ববাচনে তাঁর ছোট ভাই এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ সংসদ সদস্য হন। শহীদ মমতাজ উদ্দিন ও শেফালী মমতাজের ছেলে শামীম আহমেদ সাগর বর্তমান লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন :
নাটোরের লালপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা পায় মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ (মরণোত্তর) একুশে পদক-২০২৩-এ ভূষিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিনের হাত ধরে। লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (মুজিব বাহিনী)-এর কমান্ডার ছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ (১৯৮৬-১৯৮৮) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মমতাজ উদ্দিন রিকশা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১ বছর ১০ মাস। তিনি ১৯৯০ সালে লালপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি ১৯৮৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সম্মেলনে লালপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ফজলুর রহমান পটলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০৩ সালের ৬ জুন রাত ১০টার দিকে নাটোরের লালপুরের গোপালপুর-আব্দুলপুর সড়কের দাঁইড়পাড়া নামক স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
তাঁর স্ত্রী শেফালী মমতাজ সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁদের সন্তান শামীম আহমেদ সাগর, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (২০২২) ও ফারহানা ববি নিভা, সহকারী রেজিস্ট্রার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ছোট ভাই এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ দশম ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শহীদ মমতাজ উদ্দিনের সহধর্মিণী শেফালী মমতাজ :
এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ৩২৪-সংরক্ষিত মহিলা আসনে শহীদ মমতাজ উদ্দিনের সহধর্মিণী শেফালী মমতাজ (২৫ জানুয়ারী ২০০৯-২৪ জানুয়ারী ২০১৪) সংসদ সদস্য মনোনীত হন। নবম সংসদে তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমান তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের শরিকদলের হিস্যায় অংশিদারিত্বের দাবীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থীতা লাভ করে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এম এ তালহা।
শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ :
সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ (ঈগল) প্রতীকে ৭৭ হাজার ৯৪৩ ভোট পেয়ে ১ হাজার ৯৯৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন। তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে ৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ্যাড. আবুল কালাম আজাদের জীবন বৃত্তান্ত:নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার চকশোভ মিল্কীপাড়া গ্রামে ১৯৫৬ সালের ২৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ। পিতা বিয়াকুল প্রামানিক ও মাতা আবেজান বেওয়া। স্ত্রী উম্মে তৌহিদা আক্তার বানু। তাঁদের সন্তান তৌহিদুল আজাদ তিতাস, ইঞ্জিনিয়ার সাফিনুর রহমান পল্লব ও মেহেদী হাসান পল্লব।
তিনি করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এসএসসি, আব্দুলপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), ১৯৮১ সালে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৮৩ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ (ঈগল) প্রতীকে ৭৭ হাজার ৯৪৩ ভোট পেয়ে ১ হাজার ৯৯৬ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন।
তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে ৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সংসদ সদস্য শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই।
আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে সরাসরি অংশগ্রহন করেন। ১৯৭৩ সালে আব্দুলপুর সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হন। ১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) এজিএস নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সামরিক আদালতে যাবৎ জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত হন। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার চাপের মুখে সামরিক সরকার কর্তৃক দন্ডাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তিনি ১৯৯২ সালে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিরোধী দলের অসংখ্য মামলা ও দীর্ঘসময় কারাভোগ করেন। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরবঙ্গে শেখ হাসিনার ট্রেন সফরকালে ঈশ্বরদী ও নাটোর গোলাগুলি হলেও লালপুর ও বাগাতিপাড়ায় তাঁর নেতৃত্বে সুষ্ঠুভাবে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে পুণরায় লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন কিন্তু নির্বাচন স্থগিত হয়। ২০১৫ ও ২০২২ সালে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ন সহসভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।
শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ছেলে শামীম আহমেদ সাগর :
সাবেক সংসদস সদস্য শহীদ মমতাজ উদ্দিন ও শেফালী মমতাজের ছেলে শামীম আহমেদ সাগর লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে বিএসএস ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয় পাশ করেন। তিনি নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি, জেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্মসাধারন সম্পাদক, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি সাবেক সহসম্পাদক ছিলেন। বর্তমান লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে রাজশাহী জেলখানায় ডিটেনশন অবস্থায় প্রায় ৩ মাস বন্দী ছিলেন। ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন। তিনি রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারী পেশায় জড়িত। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.