ইমাম হাসান মুক্তি, প্রতিনিধি, নাটোর (লালপুর)
বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা ফুটবলসহ নানা রকমের খেলায় পরিপূর্ণ থাকলেও ঐতিহ্যবাহী লালপুরের বিলমাড়িয়ায় একমাত্র সরকারি ফুটবল মাঠটি সংস্কারের অভাবে গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে এলাকার যুব সমাজ খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিলমাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক, মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, বৃটিশ শাসন আমলে নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। পদ্মা নদীর তীরে এ এলাকার অবস্থান হওয়ায় ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী অঞ্চলসহ ভারতে যাতয়াত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য গড়ে উঠেছিল ষ্টিমার ঘাট। তারা সে সময় গড়ে তুলেছিলেন বিলমাড়িয়া ফুটবল মাঠ ও একটি ক্লাব।
বৃটিশ আমলে মেদিনীপুরের জমিদাররা এখান থেকে শাসনকার্যসহ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতি চর্চার জন্য খেলার মাঠ, ক্লাব এবং বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তুলেছিল। সে সময় বিলমাড়িয়া থানা সদর ছিল। লালপুরে নীলের গুদাম রক্ষার জন্য বিলমাড়িয়া থেকে পুলিশ যেত। এ ফুটবল মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের অনেক নামকরা খেলোয়াড়রা খেলাধুলা করেছেন।
সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে এ মাঠে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়েছিল। তৎকালীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী এ মাঠকে আধুনিকায়ন করার স্বপ্ন দেখান এলাকার মানুষকে।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে খেলার মাঠটি সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। ২০০৫ সালে স্টেডিয়ামের শুধুমাত্র সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলেও তা খেলাধূলার অনুপযোগী হিসেবে রয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুন ২০২১) সরেজমিন দেখা যায়, মাঠের মধ্যে কাদা জমে আছে। মাঠ জুড়ে ঘাস জন্মেছে। পূর্ব-উত্তর কোনে পানি জমে হাঁটু পরিমাণ কাদা-ময়লা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পশ্চিম-উত্তর কোণে গরু-মহিষের স্থায়ী গোয়াল-বাথান। প্রাচীরের দেওয়ালে জ্বালানীর জন্য গোবরের প্রলেপ শোকাতে দেওয়া হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমে প্রবেশের সিঁড়ি ভেঙ্গে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে ধানের খড় (পোয়াল) গাদা করে রাখা হয়েছে। পুরো মাঠ ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে।
বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু বলেন, প্রায় তিন একর খেলার মাঠটি সংস্কারের জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে দুই থেকে তিন ফুট মাটি ভরাট করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল মাঠ সংস্কারের জন্য ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে নিজে গিয়ে সুপারিশ করেছেন। একটি ড্রেসিং রুমসহ মাঠ সংস্কার হলে এলাকার ক্রীড়ামোদি যুবকরা খেলাধূলার সুযোগ পাবে।