শুক্রবার | ২৬ জুলাই, ২০২৪ | ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১

লালপুরে প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্য রকম বনভোজন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিশেষ শিশুদের আনন্দ যেন বাঁধন হারা। প্রাণ খুলে হাসি, ইচ্ছেমত দৌড়-ঝাঁপ। সময় টা যেন শুধুই উৎসবের। শুধুই উপভোগের। ইচ্ছেমত আনন্দ আর ছোটাছুটির পাশাপাশি ছিল নাচ-গান-কবিতাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।

ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে রবিবার (১০ মার্চ) দিনভর এমনই আনন্দ-আয়োজনে মাতে শিশুরা। নাটোরের লালপুর গ্রীনভ্যালী পার্কে অনুষ্ঠিত এই বার্ষিক বনভোজনে অংশ নেয় লালপুর উপজেলার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমন আয়োজনে অংশ নিয়ে শিশুরা যেমন ছিল ফুরফুরে ও প্রাণবন্ত তেমনি অভিভাবকরাও ছিলেন অনেকটাই নির্ভার ও তৃপ্ত।

বিশেষ এ শিশুদের আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান ছিল আয়োজকদের। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাছিম আহমেদ বলেন, ‘ওদের সঙ্গে সুন্দর একটি দিন কাটালাম। এটা আমার কাছে বড় আনন্দের। বলে বোঝানো যাবে না। প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে এমন আনন্দ আরও করতে চাই। আসুন, আমরা সবাই ওদের পাশে দাঁড়াই। হাত বাড়িয়ে দিই। জনতা ব্যাংক লালপুর শাখার ব্যবস্থাপক, শামীম হাসান বলেন-তাদের যে কি মেধা বোঝানো সম্ভব নয়। আমরা এটা সামাজিক কাজে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করতে পারি। এক্সিম ব্যাংক লালপুর শাখার ব্যবস্থাপক, আমিন আল মামুন বলেন-সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পেলে এই শিশুরাই একদিন পরিণত হবে দক্ষ মানব শক্তিতে।

গ্রীন ভ্যালী পার্কের পরিচালক প্রশাসন ও মার্কেটিং এস. এমসামসুজ্জোহা বলেন-বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা   পুরো পার্ক আনন্দে মাতিয়ে তুলেছে। প্রধান শিক্ষক সিমানুর রহমান জানালেন, প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুরা প্রতিবছর  আবদার করে তারা বনভোজন করবে। তারা নাছোড়বান্দা। বনভোজন করতেই হবে। প্রতিবন্ধী এসব শিশুর ইচ্ছা পূরণের জন্যই এমন আয়োজন। জানা গেল, বনভোজন উপলক্ষে ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের ১১০জন প্রতিবন্ধী শিশু সকাল ১০টার পর গ্রীণ ভ্যালী পার্কে উপস্থিত হয়। প্রতিবন্ধী এসব শিশু পার্কের সবখানে অবাধে ঘুরে বেড়ায়; আনন্দ-উল্লাস করে। আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। দুপুরে খাবারেও ছিল ব্যতিক্রমী ব্যবস্থাপনা, শিশুরা পরম আনন্দে সেগুলো খেয়েছে।

বনভোজনে এসে মহাখুশি অটিস্টিক শিশু পারভেজ। কেমন লাগছে এখানে-জানতে চাইলে পারভেজ তোতলাতে তোতলাতে বলে, ‘খুউব মজা। গান করেছি। নাছিসি, আমি এখানে আরও অনেক খেলব। বাড়ি যাব না।’
কৌতূহলী শিশুরা বাধাহীন বেড়াচ্ছিল পার্কের ভেতরে। দল বেঁধে অনেককে দেখা গেল, পুরো পার্ক ঘুরে দেখছে। এ যেন তাদের কাছে এক স্বপ্ন। বনভোজন নয়, যেন ছিল আনন্দ মেলা।

শিশুদের আনন্দকে প্রানবন্ত করতে অংশগ্রহন করেন- লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নাছিম আহমেদ, জনতা ব্যাংক লালপুর শাখার ব্যবস্থাপক, শামীম হাসান, এক্সিম ব্যাংক লালপুর শাখার ব্যবস্থাপক, আমিন আল মামুন, উত্তরা ব্যাংক লালপুর শাখার ব্যবস্থাপক, আক্তারুজ্জামান, গ্রীন ভ্যালী পার্কের পরিচালক প্রশাসন ও মার্কেটিং এস. এমসামসুজ্জোহা, ম্যানেজার ফিনান্যান্স সৈয়দ সামিউল আলম শুভ, ম্যানেজার, ওয়াজেদুর রহমান বাবলু, সহকারি ম্যানেজার, সজিব আহমেদ, দৈনিক কালবেলা লালপুর প্রতিনিধি আল-আমিন সজল,  বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, আসলাম উদ্দীন, আব্দুল মান্নান, প্রধান শিক্ষক, সিমানুর রহমান প্রমুখ।

ছায়া প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় ২০১২ সাল থেকে বিশেষচাহিদা সম্পূন্ন শিশু/ব্যক্তিদের শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পূণর্বাসনের লক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়ে,  প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ,  প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্নবিশ্বাস ও স্বক্ষমতা বাড়ানো, স্বনির্ভর জীবনযাপনের প্রশিক্ষণ দিয়ে, সমাজের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে লালপুর উপজেলার একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটি সম্পূন্ন বিনামূল্যে সুনামের সাথে অদ্যবদি পরিচালিত হয়ে আসছে ।

ছায়া যাত্রা হয়েছিল একটি ভাড়াবাড়িতে দুইজন শিক্ষার্থী নিয়ে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ২৯১জন বিশেষ চাহিদাসম্পূন্ন শিক্ষার্থী, নিজস্ব-৪৪ শতাংশ জমি, নিজস্ব অর্থায়নে একটি ভবন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জেএলআর ট্রাস্ট কর্তৃক র‌্যাম্পযুক্ত প্রতিবন্ধীবান্ধব দ্বীতল ভবন,  যুগোপযোগি ক্লাসরুম, অটিজম কর্ণার, প্রশিক্ষণ রুম, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, প্রতিবন্ধী বান্ধব শিশু পার্ক, খেলার মাঠ, র‌্যাম্পযুক্ত শহীদ মিনার, শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অনুমদিত কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টার, আধুনিকমানের ফিজিওথেরাপি সেন্টার, অত্যাধুনিক গেস্টরুম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের একমাত্র ব্যাচেলর অব স্পেশাল এডুকেশন কলেজ ও থেরাপি ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান (প্রক্রিয়াধীন) রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন খেলাধুলা, ছবি অংকন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে স্থানীয় ও জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে স্পেশাল অলিম্পিকসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহ করে জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ান হয়ে ছায়ার সুনাম অর্জন করেছে ।

এই  মহান উদ্যোগকে সহযোগিতা করে ছায়ার পথকে সুগম করছে যারা তাদের প্রতি জানাচ্ছি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের আর্শিবাদ ছায়ার অগ্রযাত্রাকে সম্বৃদ্ধ করেছে। আপনাদের সহযোগিতায় ছায়া আরো এক ধাপ এগিয়ে বিশেষচাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠিকে দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে সম্ভব হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ ।

ছায়ার একঝাক দক্ষ ও তরুণ শিক্ষক-কর্মচারীদের বিনাপ্রশ্রমিকে নিরলস সহযোগিতায়, ছায়া তার সেবামূলক মহতি কর্মকান্ডকে  সম্প্রসারিত করে তুলেছে ও  সমজের সাধারন মানুষের মধ্যে পৌছে দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে। শুধু নাই প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের কারিগর শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনভাতা। শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান করা হলে আরো উন্নয়ন হবে প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনমান।

 

 

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.