শনিবার | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

প্রতিবন্ধীতা জয় করে সফল উদ্যোক্তা মনিরুল

আনোয়ারা খাতুন শেফালী, লালপুর (নাটোর)
প্রতিবন্ধীতা জয় করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন নাটোরের লালপুরের হাফেজ মো. মনিরুল ইসলাম। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় এবং একহাত ছোট হওয়ায় প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে দিনে দিনে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। লীড টপার আইটি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হিসেবে মাসে গড়ে তিনি আয় করেন ২০ হাজার ডলার। বর্তমান ৫০ জন কর্মচারীকে মাসিক বেতন দিয়েও আয় ১৫ লাখ টাকা পার হয়ে যায় তাঁর।
সোমবার (৯ অক্টোবর ২০২৩) সরেজমিন দেখা যায়, অনলাইনে ঘরে বসেই সব কাজ তার। কখনো বিদেশি গ্রাহকের কাছ থেকে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। কখনও টিম মেম্বারদের সাথে ভার্চুয়াল মিটিং করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণদের শেখাচ্ছেন ফ্রিল্যান্সিং। তার দেখানো পথে হেঁটে এলাকার অনেক তরুণ স্বাবলম্বী হয়েছেন।
মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালে কৌতুহলে তিনি অনলাইনে আয়ের বিষয়ে আগ্রহী হন। পরিচিত বড় ভাইয়ের সাহাবুল আলমের হাত ধরেই এ জগতে পদচরণা। শুরুর অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিল না। প্রথম দিকে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। তবে দীর্ঘ ৯ বছর কঠোর পরিশ্রম করে এখন তিনি সফল ফ্রিল্যান্সার।
তিনি আরও বলেন, জীবনে অনলাইনে প্রথম আয় ৫৭ ডলার। যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা টাকার মতো, যেটা করতে সময় লেগেছিল মাত্র ২ ঘন্টা। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া এ সেক্টরে সময় বেশি দিলে মাসে ভালো টাকা আয় করা যাবে। প্রায় ৫ বছর হলো ‘লীড টপার আইটি সেন্টার’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যার মাধ্যমে লিড জেনারেশন, ডাটা এন্ট্রি, অ্যামাজন ড্রপ সিপিং, ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজটাল মার্কেটিং সার্ভিস প্রদান করছেন। ২০১৪ সালে মাত্র ৫৭ ডলার আয় দিয়ে শুরু করেছিলেন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার। ৯ বছর পর এখন মাসে গড়ে তিনি আয় করেন ২০ হাজার ডলার। বর্তমান ৫০ জন কর্মচারীকে মাসিক বেতন দিয়েও আয় ১৫ লাখ টাকা পার হয়ে যায়। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় এবং একহাত ছোট হওয়ায় প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে দিনে দিনে নিজেকে গড়ে তুলেছেন। পরিশ্রম করেই নিজেকে দক্ষ করে তুলেছেন। একটা কথা পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। এখন কথাটি সত্য মনে হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে চাকরি পাওয়া খুবই কঠিন। হাজার হাজার বেকার ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনলাইনে প্রচুর কাজ করার রয়েছে। এখান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তাই চাকরির পেছনে না ঘুরে সঠিক পথে পরিশ্রম করে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, কাজ শেখার ক্ষেত্রে মানসিকতা থাকতে হবে। ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে। শুধু ক্লিক করে টাকা ইনকাম করা যায় না। এমন একটা কাজ শিখতে হবে যাতে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে কিন্তু কাজের চাহিদা বাড়তে থাকবে। দীর্ঘ রাত জাগা পরিশ্রমের পর যখন আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের ঢুষপাড়া গ্রামে ১৯৯৮ সালের ১৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন মো. মনিরুল ইসলাম। পিতা ভ্যান চালক মন্টু মণ্ডল ও মাতা মমতাজ বেগম।
তিনি বালিতিতা থানা মসজিদ হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও রওজাতুস সুন্নাহ কওমী মাদ্রাস থেকে কোরআনে হাফেজ সম্পন্ন করেন। এরপর ঢুষপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি, মোমিনপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, পরবর্তীতে ফাজিল, ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ডিপ্লোমা, সিটি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমান লীড টপার আইটি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.