মঙ্গলবার | ৮ অক্টোবর, ২০২৪ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১

থ্রি-ডি’র মাধ্যমে স্পেয়ার পার্টস তৈরীকরনে শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান

আনোয়ারা খাতুন শেফালী, নাটোর প্রতিনিধি
কোন পার্টস বা যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে, ভেঙ্গে গেলে, লাইফ সাইকেল শেষ হয়ে গেলে অথবা গঠন পরিবর্তন হয়ে গেলে নানা সংকটে পড়ে কলকারখানাগুলো। অনেক সময় হুবহু পার্টসও পাওয়া যায় না। এমন অবস্থায় কোটি কোটি টাকার মেশিন অচল করে লোকশানের মুখে পড়তে হয়। এর থেকে বিকল্প উপায় খুঁজতেই থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে হুবহু বিভিন্ন স্পেয়ারস পার্টস তৈরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট নিয়ে গবেষনা করে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক হয়েছেন আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন কোম্পানী লিমিটেডের (এপিএসসিএল) নির্বাহী প্রকৌশলী (কারখানা) আতিকুজ্জামান। এই সফলতার মাধ্যমে এখন থেকে আর কোন যন্ত্রাংশের কারনে বন্ধ থাকবে না কোন কলকারখানা। যে কোন পার্টসই থ্রি ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরী করে কলকারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।
আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন কোম্পানী লিমিটেডের (এপিএসসিএল) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) ২০২৩-২০২৪ মোতাবেক ইনোভেশন শোকেসিং প্রদর্শনীতে ‘থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টস তৈরীকরন’ শীর্ষক উদ্যোগটি শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে নির্বাচিত হয়। যা বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন ও প্রজেক্ট উপস্থাপন করেন আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন কোম্পানী লিমিটেডের (এপিএসসিএল) নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান।


বৃহস্পতিবার (২৩ মে ২০২৪) প্রকৌশলী মো. আতিকুজ্জামান বলেন, থ্রি-ডি প্রিন্টার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি। ফোরআইআর (ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন ফোর) প্রযুক্তির থ্রি-ডি প্রিন্টারের হুবহু ত্রি-মাত্রিক বস্তু প্রিন্ট করা হয়। এই উদ্ভাবনীর মাধ্যমে অনেক জটিল পার্টসও তৈরী করে কলকারখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম গতিশীল রাখা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে এপিএসসিএল-এর বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের বিভিন্ন স্থানে থ্রি-ডি প্রিন্টেড বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টস (রাবার বুশ, প্যাড, কাপলিং, হাইড্রলিক সিল, ভ্যান ক্যাপ ইত্যাদি) ব্যবহার করা হচ্ছে। থ্রিডি প্রিন্টেড স্পেয়ার পার্টস ব্যবহার করে নানাবিধ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে স্পেয়ার পার্টস ক্রয়ের জন্য ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজন হ্রাস পেয়েছে। থ্রিডি প্রিন্টেড পার্টস সঠিক মাপমত পাওয়ায় সন্তোষজনক।
নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার তিলোকপুর গ্রামে ১৯৮২ সালের ২৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান। তাঁর বাবা মো. ওমর আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ৪১০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রবিউল আওয়ালের ছোট ভাই।
প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান ১৯৯৭ সালে লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৯ সালে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ২০০৫ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যালে বিভাগে উর্ত্তীন হন। এরপর হেলথ কেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস, চিনিকলে চাকুরী করে ২০১২ সালে আশুগঞ্জ পাওয়ার ষ্টেশন কোম্পানীতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে সততা, কর্মদক্ষতা আর মেধার স্বাক্ষর রেখে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকৌশলী আতিকুজ্জামানের বিরল এই অর্জনে গর্বিত পুরো বিদ্যুৎ বিভাগ।
উল্লেখ্য, ইনোভেশন শোকেসিং ২০২৪ এ বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার মধ্যে আয়োজিত প্রতিযোগীতায় এপিএসসিএল প্রথম স্থান অর্জন করে। বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে গত ১৯ মে ২০২৪ বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে বিদুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমানের (বিপিএএ) হাত থেকে শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী পুরস্কার গ্রহণ করেন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) নির্বাহী প্রকৌশলী (কারখানা) মো. আতিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) চেয়ারম্যান ( গ্রেড-১) মো. মাহবুবুর রহমান।


আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) ২০২৩-২০২৪ মোতাবেক ইনোভেশন শোকেসিং প্রদর্শনীতে ‘থ্রি-ডি প্রিন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্পেয়ার পার্টস তৈরিকরণ’ শীর্ষক উদ্যোগ শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসাবে নির্বাচিত হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী (কারখানা) মো. আতিকুজ্জামানের নেতৃত্বে যা বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখেন- নির্বাহী প্রকৌশলী, কারখানা (নর্থ) মো. মনিরুল ইসলাম, সহকারী প্রকৌশলী, কারখানা (নর্থ) মো. রাসেল তালুকদার, সহকারী ব্যবস্থাপক (এমআইএস এন্ড আইসিটি) মো. ফিরোজ আহম্মেদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী, কারখানা (নর্থ) রনি দে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কারখানা) মো. মাসুদ পারভেজ রুবেল, প্রধান প্রকৌশলী (এমইউ, চলতি দায়িত্ব) বিকাশ রঞ্জন রায়, জনাব তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) হারিস মোহাম্মদ ওয়াহেদী এবং উদ্যোগ বাস্তবায়নে মেন্টর হিসাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ৪৫০ মে.ও. সিসিপিপি (নর্থ)।
এর আগে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এপিএসসিএল) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) ২০২৩-২০২৪ মোতাবেক ইনোভেশন শোকেসিং গত ৪ মে ২০২৪ এপিএসসিএল কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়। এপিএসসিএল-এর নির্বাহী পরিচালক (প ও স) মোহা. আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোকেসিংয়ে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ একরাম উল্লা। সঞ্চালনা করেন ব্যবস্থাপক (এমআইএস এন্ড আইসিটি) মুহাম্মদ আমানাত মাওলা। সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন। প্রদর্শনীতে এপিএসসিএল-এর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.