মঙ্গলবার | ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

বাউয়েটে আইসিই বিষয়ে পড়ার সুযোগ

বাউয়েটে আইসিই বিষয়ে পড়ার সুযোগ
মো. আশরাফুল ইসলাম :
বর্তমান যুগ তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে জীবন যাপন কল্পনাই করা যায় না। নিত্যদিনের সঙ্গী আমাদের টেকনোলজি বা প্রযুক্তি। তথ্য প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা, তরুণ প্রজন্মের পারদর্শিতা, বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা, সৃজনশীল উদ্ভাবন, গুগল-মাইক্রোসফট সহ বিশ্বের জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ, সম্মানজনক পেশা, মানসম্পন্ন বেতন, বর্তমানে আইসিই বা আইসিটি শিক্ষা পছন্দের শীর্ষে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রযুক্তির পরিবর্তন আমাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। তাই প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর যেকোনো পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত
বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিই বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির গুরুত্বঃ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের যে বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে আইসিই।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের প্রস্তাবিত সিলেবাস টেম্প্লইট অনুযায়ী আইসিই, আইসিটি বা আইটি এর বিষয়বস্তু বাস্তবধর্মী ও জীবনমুখী। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইসিটি শিক্ষা অপরিহার্য। আইসিটির জনপ্রিয়তা এবং অপরিহার্যতা বিবেচনায় মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষার গুরুত্ব পরিলক্ষিত হচ্ছে ।
ফিরে দেখাঃ জ্ঞান ও প্রযুক্তি’ এই বাণীকে বুকে ধারন করে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কাদিরাবাদ সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি (বাউয়েট)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী বাউয়েট প্রথম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। সিই, সিএসই এবং ইইই তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রথম ব্যাচে ২১৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীতে আইসিই এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ পর্যায়ক্রমে খোলা হয়।
তথ্য ও প্রযুক্তির আধুনিক যুগে আইসিই শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১৬ সালের সামার সেমিস্টার থেকে আইসিই বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বাংলাদেশের হাতে গোনা যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) প্রোগ্রাম চালু করেছে তার মধ্যে বাউয়েট অন্যতম।
মেয়াদ ও ক্রেডিটঃ চার বছর মেয়াদী এই কোর্সে ডিগ্রী প্রাপ্তির জন্য ৮ সেমিস্টারে মোট ১৬০ ক্রেডিট সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন ৫০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়েছে।
অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি সুবিধাসমূহঃ বাউয়েট এর আইসিই বিভাগের শিক্ষার্থীদের গবেষেণার সুযোগ সুবিধা ১০০% (শতভাগ) নিশ্চিত করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ৯টি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি । ল্যাবরেটরিগুলো হচ্ছে- ১. কমিউনিকেশন ল্যাব, ২. কম্পিউটার ল্যাব, ৩. সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, ৪. কম্পিউটার নেটওয়ার্কস ল্যাব, ৫. অ্যান্টেনা অ্যান্ড স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন ল্যাব, ৬. ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ল্যাব, ৭. কম্পিউটার আর্কিটেকচার এন্ড অর্গানাইজেশন ল্যাব, ৮. কেমিস্ট্রি ল্যাব এবং ৯. পদার্থবিদ্যা ল্যাব। এছাড়াও রয়েছে বাউয়েটের অন্য চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা সম্বলিত ৩৪টি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি রয়েছে।
আইসিই বনাম সিএসইঃ আইসিই-এবং সিএসই এই দুটি প্রোগ্রামের মধ্যে পার্থক্য বোঝার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক প্রোগ্রাম বেছে নিতে পারে। ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং মধ্যে বেশ মিল রয়েছে।
আইসিই সাধারণত তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর গুরুত্বারোপ করে। এই প্রোগ্রামটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, টেলিকমিউনিকেশন, ডাটা কমিউনিকেশন, প্রোগ্রামিং (C, C++, JAVA, Python, PHP) এবং তথ্য ব্যবস্থাপনার উপর অধিকতর গুরুত্ব দেয়। এছাড়াও ওয়েব ডেভলপমেন্ট এর জন্য HTML, CSS, JavaScript, AJAX, Bootstrap শেখানো হয়।
আইসিই এর মূল বিষয়বস্তু: টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডাটা কমিউনিকেশন. ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সার্কিট, সিগন্যাল প্রসেসিং, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং।
ক্যারিয়ার সুযোগ: টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, সফটওয়্যার ডেভেলপার, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার ডাটা কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ, তথ্য ব্যবস্থাপনা পরামর্শদাতা, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং। সিএসই মূলত কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং এটা প্রয়োগের উপর গুরুত্ব দেয়। এই প্রোগ্রামটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, অ্যালগরিদম, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং বিভিন্ন কম্পিউটার ভিত্তিক প্রযুক্তির উপর ফোকাস করে।
সম্প্রসারিত চাকরির বাজারঃ চাকরির বাজারে আইসিই ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাধান্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইসিই বা আইসিটি ছাড়া আধুনিক কোন প্রতিষ্ঠান চিন্তাই করা যায়না। বাংলাদেশসহ বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও চাকরির জন্য আইসিই বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিশাল সম্ভাবনময় সুযোগ। ভবিষ্যতে চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে আইসিই বা আইসিটি যে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কাজের সুযোগঃ আইসিই বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক পার্থ প্রতিম দেবনাথ তিনি বলেন, ‘আধুনিক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর মধ্যে আইসিই ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম।’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত সকল প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে বাউয়েট এর শিক্ষার্থীদের চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রয়েছে। তাই সফলভাবে ডিগ্রি সম্পন্ন করার সাথে সাথে চাকরির বাজারে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারছে।’ আমাদের আইসিই বিভাগ থেকে পাশ করে শিক্ষার্থীরা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে চাকরি করছে।
ইসিই অনুষদের ডিনঃ আইসিই বিভাগ রয়েছে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) অনুষদের অধীন। উক্ত অনুষদের ডিন এবং সিএসই বিভাগের প্রধান হিসেবে আছেন প্রফেসর মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার ভূঁঞা। শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে বুয়েট, বিইউপি, রুয়েট, কুয়েট থেকে পাশ করা এক ঝাঁক তরুণ ও মেধাবী শিক্ষকমন্ডলি। এছাড়া রুয়েট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রফেসরগণ এখানে উপদেষ্টা হিসেবে আছেন এবং তাঁরা খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও ক্লাস নেন। শিক্ষার্থীদের বাস্তব জ্ঞান অর্জনের জন্য ক্লাসের বাইরে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়। এছাড়া ক্লাস রুমের বাইরে সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য রয়েছে ১৪টি সক্রিয় ক্লাব।
উপসংহারঃ পরিবর্তনশীল এ বিশ্বে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে জীবন আর জীবিকা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে পরিবর্তনেরও গতি হয়েছে অনেক দ্রুত। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই বিশ্বের সঙ্গে আমাদের খাপ খাওয়ানোর কোন বিকল্প নেই। কারণ প্রযুক্তির উন্নয়ন ইতিহাসের যেকোনো সময়ের চেয়ে এগিয়ে চলেছে অভাবনীয় গতিতে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আমাদের কর্মসংস্থান এবং জীবন যাপনে নিয়ে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন । এর মধ্যে দিয়ে অনেক নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে। যা এখনো আমরা জানি না। সেই ভবিষ্যতের সাথে আমরা যেন নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পদার্পণের লক্ষ মাত্র অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে । আমাদের এখন আর প্রযুক্তির ব্যবহারকারী হয়ে বসে থাকলে চলবে না আমাদের উদ্ভাবক হতে হবে, উদ্যোক্তা হতে হবে । তাই প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহার পদ্ধতি যেমন আমাদেরকে জানতে হবে। তেমনি নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে হবে। আমাদেরকে হতে হবে বৈশ্বিক ডিজিটাল নাগরিক।* মো. আশরাফুল ইসলাম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (একাডেমিক) এবং জনসংযোগ অফিসার,
কাদিরাবাদ সেনানিবাস, নাটোর।
মোবাইল: ০১৭০৮৫০৩৫১০

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.