শুক্রবার | ২৬ জুলাই, ২০২৪ | ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১

শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি :
৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ (মরণোত্তর) একুশে পদক-২০২৩-এ ভূষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন ২০২৪) মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে লালপুরের মিল্কিপাড়া গ্রামে কবর জিয়ারত, দাঁইড়পাড়া স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
২০০৩ সালের ৬ জুন রাত ১০টার দিকে নাটোরের লালপুরের গোপালপুর-আব্দুলপুর সড়কের দাঁইড়পাড়া নামক স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। ২০০৩ সালের ৭ জুলাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শহীদ জননেতা মমতাজ উদ্দিনের স্মরণে করিমপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে এক স্মরণ সভা করেন। আর যে স্থানে শহীদ মমতাজ উদ্দিনকে হত্যা করা হয় সেই স্থানে তাঁর স্মৃতির স্মরণে চিরঞ্জিব শহীদ মমতাজ উদ্দিন নামে একটি স্মরণ সৌধ নির্মান করা হয়। ২০০৪ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জলিল স্মরণ সৌধটি উদ্বোধন করেন।


মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সন্তান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ছোট ভাই বর্তমান সংসদ সদস্য পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করেছেন।
নাটোর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও শহীদ মমতাজ উদ্দিনের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম আজাদ কবর জিয়ারত, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেন। লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোকসানা মোর্তজা লিলি, লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, চংধুপইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম, অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন প্রমুখ।


অপর দিকে নবনির্বাচিত লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ মমতাজ উদ্দিন ও সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য শেফালী মমতাজের ছেলে মো. শামীম আহমেদ সাগর পৃথকভাবে কবর জিয়ারত, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে আলোচনা সভা করেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আ স ম মাহামুদুল হক মুকুল, বদিউর রহমান বদর, গোলাম মোর্শেদ, ওয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরে আলম সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বাঘা, উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রমজান আলী, প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, ইউসুফ হোসেন, সদস্য আলতাফ হোসেন কুটি, আবুল কালাম, আড়বাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন্টু, মো. গোলাম মোস্তফা, দুয়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম লাভলু, কদিমচিলান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছারুল ইসলাম, অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা আসলাম প্রমুখ।
জীবন-বৃত্তান্ত:
নাটোরের লালপুর উপজেলার আব্দুলপুর মিল্কিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন। পিতা বিয়াকুল প্রামানিক ও মাতা আবেজান বেওয়া। স্ত্রী শেফালী মমতাজ (২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য মনোনীত হন)। তাঁদের সন্তান শামীম আহমেদ সাগর, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (২০২২) ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ফারহানা ববি নিভা, সহকারী রেজিস্ট্রার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ (মরণোত্তর) একুশে পদক-২০২৩-এ ভূষিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন।
তিনি করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অস্টম শ্রেণি, চকনাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি, নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ঈশ্বরদী জিন্নাহ কলেজ (বর্তমান ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ) থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক পাশ করেন।
তিনি লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (মুজিব বাহিনী)-এর কমান্ডার ছিলেন।
১৯৭৭-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি সালামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পরাজিত হন। নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ (১৯৮৬-১৯৮৮) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মমতাজ উদ্দিন রিকসা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১ বছর ১০ মাস। তিনি ১৯৯০ সালে লালপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
তিনি ১৯৮৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সম্মেলনে লালপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির ফজলুর রহমান পটলের নিকট পরাজিত হন।
২০০৩ সালের ৬ জুন রাত ১০টার দিকে নাটোরের লালপুরের গোপালপুর-আব্দুলপুর সড়কের দাঁইড়পাড়া নামক স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.