লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুরের জাগরণী স্পোর্টিং ক্লাব ২৯তম বর্ষে পদার্পন করেছে। ২৮তম বর্ষপূর্তিতে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
উপজেলার লালপুর কলেজ মোড়, শিবনগর, বুধপাড়া, জোতদৈবকী, ডেবরপাড়া গ্রামে বসবাসরত খেলোয়াড়দের নিয়ে ১৯৯৫ সালের ৬ অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত হয় জাগরণী স্পোর্টিং ক্লাব।
মূলত লালপুর ডিগ্রি কলেজের মাঠকে কেন্দ্র করেই এই ক্লাব ও খেলোয়াড়দের বেড়ে ওঠা। উপজেলার শহীদ মমতাজ উদ্দীন স্টেডিয়ামের পরই সবচেয়ে বড় ও খেলার উপযোগী সুন্দর এই কলেজ মাঠ। মাঠের কাছেই অবস্থান হওয়ায় এখানে খেলেই বেড়ে উঠেছেন ক্লাবের সবাই।
১৯৯৫ সালের ৬ অক্টোবর, শুক্রবার বিকেলে লালপুর কলেজ মাঠে বসে চলাকালীন এক আড্ডায় প্রতিষ্ঠিত হয় জাগরণী স্পোর্টিং ক্লাব। ক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হন লালপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আব্দুল ওয়াদুদ ও সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুল্লাহ আল মামুন। ক্লাবের নামকরন করেন অধিনায়ক আব্দুল ওয়াদুদ। খেয়োয়াড়দের নতুন করে জাগিয়ে তুলতে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে যে জাগরণ, সেখান থেকেই নামটা এসেছে ‘জাগরণী’।
দীর্ঘদিন অধিনায়কত্ব করেছেন মো. সাকাম। খুবই চমৎকার ও দূরদর্শী একজন অধিনায়ক। যার নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় ও মাঠে জাগরণী ক্লাবের এক চেটিয়া দাপট দেখানো সম্ভব হয়েছে। তাঁর সমসাময়িক খেলোয়াড়বৃন্দ হলেন সৌমিত্র, ঈমন, সাজেদুল, কল্লোল, আরিফ, বুলবুল, রবিসহ আরও অনেকে। এই অসাধারণ অধিনায়ক সাকামের অধীনেই ২০১১ সালে আহমে রিজভীর অভিষেক হয়।
এরপর জাগরণীকে এগিয়ে নিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে মো. জহুরুল ইসলাম লালন। তাঁর নেতৃতে অনেক টুর্নামেন্ট ও ম্যাচ খেলা হয়েছে। সেই সময়ের খেলোয়াড়রা হলেন সজল, পূষা, রকি, সমর, আবু হুরাইরা প্রমুখ। সেই সময়েও ভালোভাবে এগিয়েছিল ক্লাবটি।
২০০৮ সালের দিকে জাগরণীর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন মো. আবু হুরাইরা। ক্রিকেটার হিসেবে তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে অনেকের, তবে আবু হুরাইরার সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি ক্লাব ও খেলোয়াড়দের প্রতি খুবই নিবেদিতপ্রাণ।
আবু হুরাইরার পরে তার ছোট ভাই গোলাম মোর্তজা ক্লাবের অধিনায়কের দায়িত্ব পান। অসাধারন একজন অলরাউন্ডার, নিজে ভালো খেলার পাশাপাশি সে সতীর্থদের কাছ থেকে ভালো খেলা কিভাবে বের করে নিয়ে আসতে হয়, সেটা ভালো করেই জানতেন। বর্তমান সময়ে ঢাকা, নাটোর, লালপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় দাপিয়ে খেলে বেড়ানো মামুন-আসিফদের বেড়ে ওঠাতে মোর্তজার অবদান অনেক বেশি। বর্তমান জাগরণীর অধিনায়ক রনিও মোর্তজার একদম সরাসরি শিষ্য। মোর্তজার সমসাময়িক একজন খেলোয়াড় হলেন, আওয়াল, একটা দুর্ঘটনায় মারা যান। পাশাপাশি আরিফ, আসিফ, আহাদ, সাগর, জয়ন্ত, রিন্টু প্রমুখ।।
তাঁর পরেই আসে আসিফের অধিনায়কত্ব। দারুণভাবে কিছু দিন এগিয়ে যাবার পরে শুরু হয় রনির অধিনায়কত্ব, যা এখনো চলমান। মাঝে দলের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যায় লিপুকে কিছু ম্যাচে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ক্লাবের নেতৃত্বে, তিনিও অসাধারণভাবে ক্লাবটিকে এগিয়ে নিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন। বর্তমানে খালেদ, সাগর, আরিফ, হৃদয়, মোহন, আকাশ, রিমন, বাঁধন, রোহান, শাহেদ, ইমনদের দীপ্ত পদচারনায় মুখরিত জাগরনী।
জাগরণী স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্যরা মূলত ক্রিকেট খেলোয়াড় হলেও পড়াশোনাতেও তাঁদের দীপ্ত পদচারণা বিদ্যমান। ক্লাবের বর্তমান খেলোয়াড়দের মধ্যে কাজল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, সিজান খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত, পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক ইন্সটিউটে অনেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাবেক খেলোয়াড়দের মধ্যে কল্লোল, মারুফ, মাইদুল কুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। ডা. সুমন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে, ডা. শরিফুল খুলনা মেডিকেল কলেজ থেকে ও ডা. আহমেদ রিজভী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে সরকারি চাকুরী করছেন।
জাগরনী স্পোর্টিং ক্লাবের সার্বক্ষনিক পাশে আছেন এডিশনাল ডিআইজি লালপুরের কৃতী মো. আলমগীর কবির পরাগ, রাজশাহীর স্বনামধন্য স্ত্রী ও প্রসুতি বিদ্যা বিভাগের চিকিৎসক ডা. তাহসীনা শামীম তাসু, রাজশাহী মেডিকেলের সহকারী রেজিস্টার ডা. আরাফাত মিল্লাত, ডা. ফেরদৌস আবির, কোলোরেক্টাল সার্জারির সহকারি রেজিস্টার ডা. শেখ তপতী তাহসিন প্রমুখ।
কলেজ মাঠকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ক্লাবটি এগিয়ে যাচ্ছে। আরও এগিয়ে যেতে পারে সবার সুন্দর, সম্মিলিত কিছু পদক্ষেপে। একটা ক্লাব ঘর, লেখাপড়ায় ভালো ক্লাবের সদস্যদের জন্য কিছু অনুদানের ব্যবস্থা, ক্রিকেট খেলার সরঞ্জামগুলো হাতের নাগালে থাকা ও অনুশীলনের জন্য একটা ইনডোর দরকার। ক্লাবটির সীমাবদ্ধতা ও সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা জরুরি।
তথ্যসূত্র: সাক্ষাৎকার, ডা. আহমেদ রিজভী, সহকারি রেজিস্টার, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।