শনিবার | ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

প্রায় দুই তৃতীয়াংশ লোডশেডিংয়ে দুর্বিসহ জনজীবন

নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমে আর তীব্র লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন। দেশের উষ্ণতম স্থানে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৪-১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকায় মানুষের চরম ভোগান্তি দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন ২০২৪) বেলা ১২ টায় নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতাধীন লালপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. রেজাউল করিম জানান, দিনের বেলায় (বেলা ১২.০০) চাহিদা ছিল ১৮ মেগাওয়াট। সেখানে বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৮ মেগাওয়াট। একইভাবে গত রাতে ২৩ মেগাওয়াটের স্থলে মিলছে ১২ মেগাওয়াট। এলাকার অন্তর্ভুক্ত বিদ্যুতায়িত গ্রাম ২০১৭ টি। সঞ্চালন লাইন ৯৬৫ কিলোমিটার। সংযোগপ্রাপ্ত ৭০ হাজার ৬০৯ জন গ্রাহকের সর্বোচ্চ চাহিদা প্রায় ২৬ মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকট ও পাওয়ার প্লান্টের সমস্যার কারণে চাহিদার থেকে ৫০ শতাংশেরও কম বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।


ইতিমধ্যে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান তোহিদুল ইসলাম বাঘা পৃথকভাবে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে লালপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. রেজাউল করিমের সাথে তাঁর অফিসে বৈঠক করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন বেশি। দিন-রাত সমানতালে লোডশেডিং হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা এমন অভিযোগ করছেন। ফলে শিশু-বৃদ্ধসহ বাড়িতে থাকা অসুস্থ মানুষজনকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাদের বিশ্রামের প্রয়োজন হলেও বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে থাকতে পারছেন না। ফলে কেউ কেউ গাছের ছায়ায় মাদুর বিছিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। এ ছাড়াও খাবার পানি, রান্নাসহ ঘরের আনুষঙ্গিক কাজ করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গৃহিণীরা। রাতেও বিদ্যুতের একই অবস্থা হওয়ার কারণে ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। তীব্র রোদ আর ভ্যাপসা গরমে ঘরে থেকে ফ্যানের বাতাসও গা ঘামছে। গ্রাহকরা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষুব্ধ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।


এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোসা. আতিয়া ফেরদৌস রুবা বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি আছে। তীব্র গরম মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে পড়াশোনা করতে পারা যাচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে দিনে-রাতে ঠিকমতো বিশ্রাম ও ঘুম না হওয়ায় শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হাত পাখায় বাতাসের অভ্যাস নেই। এখন পরীক্ষায় ভাল ফলাফল নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা মো. শাহজাহান আলী শুভ জানান অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের জন্য জনগণকে ডিজিটাল সেন্টারের বিভিন্ন সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেবা বঞ্চিত জনগণ ভোগান্তিতে পড়ছেন।
থানাপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক মফিল উদ্দিন বলেন, দিনে রাতে কতবার যে বিদ্যুৎ গেছে তার হিসাব নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় ভ্যানের ব্যাটারি চার্জ দিতে না পারায় ভাড়া খাটতে পারছেন না। ভ্যানের ওপর নির্ভরশীল তাই এখন সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে। তার ওপর গরমে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারায় শরীর খারাপ আর ঝিমুনি কাটছে না।
মঞ্জিলপুকুর কৃষি, কারিগরি ও বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও এইচএসসি (বিএমটি) পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব মো. সাইফুল ইসলাম রিপন বলেন, তীব্র গরমে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনায় বিঘ্ন ঘটছে। পরীক্ষার মধ্যে এ রকম লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। লোডশেডিং কমাতে আমাদেরকে সচেতন হওয়া জরুরি। উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করে তুলনামূলকভাবে লোডশেডিং কমিয়ে আনতে আমাদের ভূমিকা পালন করতে হবে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার সরকার জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।
নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি নিজেও একজন ভুক্তভোগী। ইতিমধ্যে চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। শীঘ্রই সমস্যা থেকে উত্তোরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.