বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১

নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে বেজা চেয়ারম্যান

আনোয়ারা খাতুন শেফালী।।
নাটোরের লালপুরে পদ্মা চরে প্রস্তাবিত ‘নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল’ পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সাবেক সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ ২০২৩) পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন, নাটোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ, লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসাহাক আলী, ইউএনও শামীমা সুলতানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ বসাক প্রমুখ।
বেজা চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ (গেটওয়ে) লালপুরে পদ্মার চরে নাটোরে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে আশার আলো দেখবে। এখানে কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উপযোগী স্থান। এ সময় তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাঠানোর নির্দেশ দেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা’র বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালপুরে পদ্মার চরে প্রস্তাবিত ‘নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল’ ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর অনুমোদন দেন।
লালপুর উপজেলার আরজী-বাকনাই রসুলপুর, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, বালিতিতা, লালপুর ও চরজাজিরা এই পাঁচটি মৌজার পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ চর এলাকায় তিন হাজার ৪১৮ দশমিক ৪৬ একর সরকারি খাসজমির ওপর প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের এলাকা থেকে পদ্মা নদীর দূরত্ব ৬ কিলোমিটার, ঈশ্বরদী জংশন থেকে ১৫ কিলোমিটার ও ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কৃষিনির্ভর এলাকা হওয়ায় এখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প-কারখানা বিকাশের সুযোগ রয়েছে। গ্যাস ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পর্যাপ্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। প্রস্তাবিত স্থানকে বন্যামুক্ত উচ্চতায় উন্নীত করতে আনুমানিক চার থেকে পাঁচ ফুট মাটি ভরাট করা হবে।
২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) উপ-সচিব আবু হেনা মো. মোস্তাফা কামাল (ব্যবস্থাপক, বিনিয়োগ উন্নয়ন)। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উপযোগী স্থান।
২০১৬ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পাঠানো চার সদস্যের ভারতীয় পরামর্শক দল অভিষেক মুখার্জি, ডে বায়ন, প্রভাকরণ ও সত্যমূর্তি প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তাঁরা স্থানীয় রেলওয়ে, সওজ (সড়ক ও জনপথ), বিদ্যুৎ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, বিমানবন্দর, গ্যাস কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পরামর্শক দলের সদস্য অভিষেক মুখার্জি বলেন, লালপুরে পদ্মার চরে নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য সব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এলাকার প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। এতে এলাকারও উন্নয়ন ঘটবে।
লালপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে আয়তনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গত ২০১৫ সালের ২ মে স্থান নির্ধারণ ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে এর পক্ষে মত দেন বেজার তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক নুরুন্নবী মৃধা। এরপর ২১ নভেম্বর তৎকালীন বেজার নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ আব্দুস সামাদ এবং ২৫ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যে পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব এস এম শওকত আলী।
তাঁরা বলেন, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে তোলা হবে কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স কারাখানাসহ অন্য প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা যাবে। জিটুজি (গভর্নর টু গভর্নর) পদ্ধতিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে এখানে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদিত পণ্যের সিংহ ভাগ সরবরাহ করা হবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে।
বেজার উপ-প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নাটোর উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ (গেটওয়ে)। নাটোরের লালপুরে পদ্মার চরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনা বিরাজমান। এতে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। রপ্তানী খাতে অতিরিক্ত আয় আসবে।
নাটোরের ডিসি শামীম আহমেদ বলেন, বেজা চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
৫৮ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, বাংলাদেশের সর্বনিম্ন বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতম স্থান লালপুরে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলাকার মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটবে। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সম্প্রতি সংসদে এবং বেজা চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.