লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেট সংলগ্ন মানবকল্যাণ মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স নামে এক নারী চিকিৎসককে ডিবি পরিচয়ে হেনস্তা ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানে পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর ২০২৩) আদালতের মাধ্যমে তাকে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে সোমবার ডিবি ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে নাটোর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত হাসপাতালের পরিচালক একাব্বর হোসেন শান্ত (৩৭) উপজেলার জোতদৈবকী গ্রামের হাসেম আলীর ছেলে।
নারী চিকিৎসককে ডিবি পরিচয়ে হেনস্তা ও ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গত ৯ অক্টোবর ২০২৩ রাতে উপজেলার হাসপাতালের পরিচালক ও জোতদৈবকী গ্রামের হাসেম আলীর ছেলে একাব্বর হোসেন শান্ত (৩৭), তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম (৩০) ও বালিতিতা রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী কল্পনা বেগম (২৮) এই তিনজনের বিরুদ্ধে লালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই চিকিৎসক।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে স্থাপিত মানবকল্যাণ মডেল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন ওই চিকিৎসক। গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ঢাকা জোনের ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে ওই চিকিৎসকের ভ্যানিটি ব্যাগে হেরোইন জাতীয় বস্তু দিয়ে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে ব্লাক মেইল করে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় রাতভর একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় ওই চিকিৎসককে। এ সময় ওই নারী চিকিৎসককে কু-প্রস্তাব দিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করেন ওই হাসপাতালের পরিচালক একাব্বর হোসেন শান্ত। পরে বিষয়টি নিয়ে অন্যদের জানানোর চেষ্টা করলে এই ঘটনার সকল সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্যান্য প্রমান লোপাট করেন। এসব ঘটনায় রহিমা বেগম ও স্টাফ কল্পনা বেগম সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
মানবকল্যাণ মডেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের পরিচালক মো. একাব্বর হোসেন শান্ত বলেন, তাঁর হাসপাতালের ওই নারী আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হঠাৎ করে বুধবার (৪ অক্টোবর ) ভোর ৬টার দিকে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগকারী ওই নারী চিকিৎসক (আবিদা বিনতে আনোয়ার-০১৫২১৩২৬৩২৫) বলেন, শান্তর উপস্থিতিতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি জোর করে তাঁর ব্যাগ তল্লাশী করেন। তাতে কিছু না পেয়ে পকেট থেকে পাওডার জাতীয় দুটি প্যাকেট বের করে মাদক মামলার ভয় দেখান। তখন শান্ত বিষয়টি দেখবেন বলে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অসম্মতি জানালে তাঁকে আটকে রাখেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ওই নারী চিকিৎসকের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার ডিবি ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে নাটোর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাকে নাটোর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর ২০২৩ হাসপাতালটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে এ ঘোষনা দেন লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এম শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ মশিউর রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী মানবকল্যাণ মডেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স পরিদর্শনকালে হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি থাকলেও সেখানে কোন ডাক্তার ছিলেন না। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম থাকায় হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়।
গত বছর ২৪ আগস্ট দিনগত রাত সোয়া ১২টার দিকে এই হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশু জন্মদানের সময় শারমিন আক্তার (১৯) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়।