বৃহস্পতিবার | ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৪ পৌষ, ১৪৩১

চতুর্থ প্রজন্মের পরমাণু চুল্লী প্রযুক্তি বাস্তবায়নে রসাটমের সাফল্য

ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা
পরবর্তী প্রজন্মের ফাস্ট নিউট্রন রিয়্যাক্টরের জন্য জ্বালানী তৈরিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে রাশিয়ার রাস্ট্রীয় পরমাণু শক্তি সংস্থা রসাটম। চতুর্থ প্রজন্মের বিএন-১২০০ রিয়্যাক্টরের জন্য ইউরেনিয়াম-প্লুটোনিয়াম ভিত্তিক দুই ধরণের পারমাণবিক জ্বালানী তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো হলো- মক্স (MOX) এবং স্নাপ (SNUP) জ্বালানী। প্রসারটনের মিডিয়া উইন মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার সাইবেরিয়া কেমিক্যাল কম্বাইনড প্ল্যান্টে তৈরি হচ্ছে নতুন এই জ্বালানী এসেম্বলী যেগুলো বেলাইয়ার্স্ক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লীতে পরীক্ষা করা হবে। ২০২৫ সালেই জ্বালানীগুলো লোড করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ পরীক্ষার মাধ্যমে, জ্বালানীগুলোর মূল্যায়ন করা হবে, এগুলোর কার্যকারিতা খতিয়ে দেখা হবে এবং পরবর্তীতে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হবে।
রাশিয়ার বিএন-১২০০ হতে যাচ্ছে সিরিয়াল ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত বিশ্বের প্রথম ফাস্ট নিউট্রন রিয়্যাক্টর। বেলাইয়ার্স্ক পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে বর্তমানে চালু বিএন-৬০০ এবং বিএন-৮০০ রিয়্যাক্টরের পর রাশিয়ার সোডিয়াম-কুল্ড রিয়্যাক্টর লাইনে বিএন-১২০০ হতে যাচ্ছে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। বেলাইয়ার্স্ক সাইটেও বিএন-১২০০ স্থাপিত হবে যার নির্মান কার্যক্রম ২০২৭ সালে শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
রসাটমের পরমাণু জ্বালানী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টেভেল এর সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার উগ্রিউমভ জানান যে, বিএন-১২০০ রিয়্যাক্টরের ডিজাইন এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে স্নাপ এবং মক্স উভয় ধরণের জ্বালানী ব্যবহার করা সম্ভব হবে। তিনি জানান যে, মক্স জ্বালানী প্রস্তুত ও ব্যবহারে রসাটমের ইতোমধ্যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। তবে, স্নাপ জ্বালানীতে অতিরিক্ত কিছু সুবিধা রয়েছে যা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
চতুর্থ প্রজন্মের পারমাণবিক শক্তি ব্যবস্থাঃ আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী এই ব্যবস্থায় উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ জ্বালানী দক্ষতা, অধিকতর নিরাপত্তা, অধিকতর এনার্জী উৎপাদন ছাড়াও পরমাণু বর্জ্যের পরিমান উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়ে থাকে। চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি ব্যবহারে রাশিয়া নেতৃস্থানীয়। বেলাইয়ার্স্কে বিএন-১২০০ রিয়্যাক্টর এবং টমস অঞ্চলে বিশ্বের প্রথম ক্লোজড ফুয়েল সাইকেল নিশ্চিতকারী লীড-কুল্ড ব্রেস্ট-ওডি-৩০০ রিয়্যাক্টর স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ফাস্ট নিউট্রন রিয়্যাক্টরঃ এই রিয়্যাক্টরগুলো যে পরিমান জ্বালানী ব্যবহার করে, তার চেয়ে বেশি উৎপাদনে সক্ষম। বর্তমানে প্রচলিত থার্মাল রিয়্যাক্টরগুলো ইউরেনিয়ামের শুধুমাত্র এক শতাংশ ব্যবহার করে এবং বাকী নিরানব্বই শতাংশ বর্জ্যে রূপান্তরিত হয়। ফাস্ট রিয়্যাক্টরগুলো জ্বালানী চক্রে যে সেকেন্ডারি প্রোডাক্ট যেমন প্লুটোনিয়াম এবং তেজস্ক্রিয় ট্রান্সইউরানিক এলিমেন্ট তৈরি হয়, সেগুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করে।
মক্স ফুয়েলঃ ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানীর পুনঃপ্রক্রিয়ায় যে প্লুটোনিয়াম অক্সাইড এবং ক্ষয়প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম অক্সাইড বাই প্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া যায়, সেগুলো থেকে মক্স ফুয়েল তৈরি হয়। ২০২৪ সাল থেকে রাশিয়া তাদের বিএন-৮০০ রিয়্যাক্টরে মক্স জ্বালানী এসেম্বলী শুরু করেছে।
স্নাপ ফুয়েল (মিক্সড ইউরেনিয়াম-প্লুটোনিয়াম নাইট্রাইড)ঃ এই জ্বালানীতে বর্তমানে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম ডাই-অক্সাইডের পরিবর্তে ইউরেনিয়াম এবং প্লুটোনিয়ামের নাইট্রাইড ব্যবহৃত হয়। বানিজ্যিকভাবে এটির ব্যবহার এখনো শুরু না হলেও, ভবিষ্যতে সোডিয়াম অথবা, লীড কুল্যান্ট ভিত্তিক ফাস্ট রিয়্যাক্টরে এগুলো ব্যবহৃত হবে। অতি উচ্চ ঘনত্বের এই জ্বালানীর জন্য যে রিয়্যাক্টর তৈরি হবে, তার ডিজাইন অপেক্ষাকৃত কমপ্যাক্ট এবং এগুলোর জ্বালানী দক্ষতাও অপেক্ষাকৃত বেশি। এই জ্বালানী ২০১৪ সাল থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
রসাটমের ভারসাম্যপূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানীচক্রঃ ক্লোজড ফুয়েল সাইকেল নিশ্চিত করা, তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের পরিমান এবং তাদের কার্যক্রম হ্রাসকরণ এই জ্বালানী চক্রের মূল লক্ষ্য। এর মাধ্যমে অধিকতর নিরাপত্তা অর্জন, পরিবেশগত ঝুঁকি হ্রাস এবং মূল্যবান পারমাণবিক ম্যাটেরিয়াল রিসাইকেল করা সম্ভব। বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস এবং পারমাণবিক এলিমেন্টগুলোকে পুনঃরায় ব্যবহার করার মাধ্যমে টেকসই এনার্জী মডেল অর্জনে এই উদ্যোগ বিশেষভাবে সহায়ক।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.