স্বপন কুমার কুন্ডু :
ঈশ্বরদীর সাহাপুর ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামের ইমান সরদারের পুত্র জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক শাহিনুজ্জামান শাহিন লেবু চাষ করে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দশ বিঘা জমিতে চায়না থ্রি জাতের লেবুর আবাদ করে বছরে ৬০ লাখ টাকা বিক্রির প্রত্যাশা। চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এবং রমজানে লেবু বিক্রি করে ৩০ লাখ টাকা আয় হবে। বছরের অবশিষ্ঠ ৮ মাসে আরও ৩০ লাখ টাকার লেবু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
শাহিনের মোট এক হাজার লেবুর গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ১ হাজারেরও বেশী লেবুর ফলন পাওয়া যাবে। রমজানে প্রতিটি লেবুর দাম ৬ টাকা হিসেবে এবং অন্য সময়ে ৩ টাকা হিসেব করলে বছরে একটি গাছ থেকেই ৬-৮ হাজার টাকা লেবু বিক্রি হবে।
সরেজমিনে শাহিনের লেবুর বাগানে দেখা যায়, প্রতিটি গাছেই বিপুল পরিমাণে ফুল এবং পর্যাপ্ত লেবু ধরেছে। লেবু চাষি শাহিনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাগানের বয়স দুই বছর। ১৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে এই বাগান থেকে লেবুর ফলন পাওয়া যাবে। লেবুর সাথে সাথী ফসল হিসেবে ফাঁকা জায়গায় মরিচ, কলা, কাকর, পালং শাকের আবাদ হচ্ছে। দশ বিঘায় লেবুর বাগান করতে খরচ হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। বাগান পরিচর্যায় ঘাস নিড়ানো, আগাছা পরিস্কার, সার ছিটানো ও শ্রমিক খরচে প্রতি বছর ব্যয় হয় প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। সাথী ফসল বিক্রি করে পরিচর্যার ব্যয় অনেকটাই ফেরত আসে। বাগানে পানি দেওয়ার জন্য বিএডিসি’র সেচ বিভাগ থেকে সৌরশক্তি চালিত ডাগওয়েল (পাতকুয়া) স্থাপন করায় বছরের কোন সময়েই পানির সংকট হয়না।
লেবু চাষি শাহীন বলেন, প্রথমে ঈশ্বরদী শহরে রড-সিমেন্টের দোকান ছিল। ব্যবসা ভালো না চলায় বাবার জমিতে প্রায় ২০ বছর ধরে চাষাবাদ করছি। লেবু বাগান থেকে কোটি টাকা উপার্জনের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, রমাজান মাসে প্রতিটি গাছ থেকে ৫০০ করে লেবুর ফলন পাওয়া যাবে। সেসময় প্রতিটি ৬ টাকা দামে বিক্রি করলে ৩০ লাখ টাকা উপার্জন হবে। আষাঢ় মাসে ফলন হয় অনেক বেশী। সেসময় লেবুর দামও কমে যায়। রমাজান, চৈত্র-বৈশাখসহ চার মাস বাদ দিলে বাকি ৮ মাসে আরও ৩০ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হবে। বছরে দুইবার সার প্রয়োগসহ বাগান পরিচর্যায় ব্যয়ের বেশীর ভাগ দায় সাথী ফসল বিক্রি করে মেটানো হয়। লেবু ছাড়াও পেঁয়াজ, গাজড়, বেগুন, মূলা, কলা ও ক্যাপসিকামের আবাদ রয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মিতা সরকার বলেন, এখানকার মাটি লেবু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী হওয়ায় একসময়ে এই এলাকা লেবু চাষের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলো। ব্যাপক ভিত্তিতে লিচু চাষের কারণে লেবুর আবাদ কমে গেছে। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন দেশে লেবুর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। চায়না-থ্রি ও থাই লেবু উৎপাদনের পরিমাণ দেশী কাগজি লেবুর চেয়ে অনেক বেশী। বিশেষ করে রমজান মাসে এবং এবং খরাকালীন ( চৈত্র-বৈশাখ) সময়ে লেবুর চাহিদা বেড়ে গেলে বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়। কৃষক শাহিনুজ্জামান শাহিনকে বিএডিসি’র সেচ বিভাগ থেকে সৌরশক্তি চালিত ডাগওয়েল (পাতকুয়া) সরবরাহ করায় খরা মৌসুমসহ কখনই গাছে পানির সমস্যা হচ্ছে না। যেকারণে তিনি সবসময় ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন।