নিজস্ব প্রতিবেদক
মানবদেহ শুধু প্রাণকে ধারণ করে না। এর সঙ্গে যেমন আত্মার সম্পর্ক, তেমনি সামাজিক সংস্কার সূত্রও আছে। পার্থক্য আছে শরীর আর যাপিত জীবনেরও। সেই বোধকে শিল্পমাধ্যমে তুলে আনতে চাইলে কখনো শিল্পী তাঁর সীমানার ভেতরে থেকে কাজ করেন, কখনো প্রাধান্য পায় শিল্পীর কল্পনা। তাই মানবদেহের বিস্তৃতি অনেক রকম।
মানবদেহের বহুমাত্রিক সংযোগ নিয়ে শিল্পী শরদ দাসের ৪৫টি শিল্পকর্মের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে রাজধানীর লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে। শুক্রবার (১৩ আগস্ট ২০২৩) সন্ধ্যায় ‘দ্য আর্কাইভিং বডি’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কাজী খালিদ আশরাফ, শিল্পী ঢালী আল মামুন এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
প্রদর্শনীতে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়বে দুই হাতের ভেতরে মৃত পাখি পড়ে থাকার একটি দৃশ্য। পাশেই রয়েছে বড় ক্যানভাসে আঁকা ‘একসার্প্ট মাই কোয়ারেন্টিন ডে’ নামের শিল্পকর্মটি। অ্যাক্রেলিক মাধ্যমের এ কাজটি শিল্পী করোনা মহামারির মধ্যে তিন বছর সময় নিয়ে করেন। এ তথ্য জানিয়ে শরদ দাস বললেন, বাংলায় এটির নাম হতে পারে ‘করোনাকালের ডায়েরি থেকে উদ্ধৃত’।
শরীর আর যাপিত জীবনের তুলনামূলক পার্থক্যের উদাহরণ দেন কাজী খালিদ আশরাফ। তিনি বলেন, আধুনিকতা বহুমাত্রিক। আশা–নিরাশারও অনেক মাত্রা আছে। শরদ দাসের ছবির বর্ণনায় পাওয়া যায় আর্তনাদ। শরীরকে নথিগত করার চেষ্টা করাই শিল্পীর কাজ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
শিল্পী ঢালী আল মামুনের বক্তব্যে উঠে আসে মানবশরীরের সংযোগ সম্পর্কে। তিনি বলেন, নগর থেকে স্থাপত্য সবকিছুর সঙ্গেই দেহের সম্পর্ক আছে। এই উপমহাদেশে দেহ সম্পর্কে ভাবনা অনেক বিস্তৃত। আত্মা থেকে সমাজ সবকিছুর সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে। এই প্রদর্শনী মানুষের মনের নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তাহীনতার শিল্পকলার ভাষা সম্পর্কে ধারণা দেয়। শিল্পী শরদ দাসের রঙের ব্যবহার সুচিন্তিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘দ্য আর্কাইভিং বডি’ প্রদর্শনীর সূত্রে চট্টগ্রামের শিল্পকলার স্বতন্ত্র ধারার কথা এবং এক দশক আগের একটি প্রদর্শনীর স্মৃতিচারণা করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী। করোনা মহামারির মতো ভয়াবহ ঘটনাকে মানুষের যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখার প্রয়োজন আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শিল্পী শারদ দাশ জানান, করোনা মহামারি বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষকে শরীর নিয়ে একই রকম ধারণা দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত কোনো গ্রামের একজন মানুষ যেভাবে এতে করে আতঙ্কিত হয়েছেন, তেমনি আমেরিকায় বসে থাকা একজনেরও একই অনুভূতি ছিল। অধিকাংশই করোনাকালের হলেও কিছু কিছু চিত্রকর্ম ২০১৬ সাল থেকে আঁকতে শুরু করেছিলেন বলে জানান তিনি।
শিল্পী শারদ দাশের এই একক প্রদর্শনীর কিউরেটর শার্মিলি রহমান। ২৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রদর্শনী দর্শকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো