নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে ওয়ার্ড যুবদলের এক নেতাকে সেনাবাহিনী আটক করার প্রতিবাদে থানার সামনে বিক্ষোভ ও ত্রিমোহিনীতে সড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকাল ১০ টার দিকে লালপুর থানার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে লালপুর ত্রিমোহনীতে অবস্থান নেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এর ফলে লালপুর থেকে নাটোর, বাঘা ও ঈশ্বরদী সড়কে প্রায় পাঁচ কিলো মিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
আটকরা হলেন, লালপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও লালপুর কলোনিপাড়া গ্রামের মৃত আনেজের খাঁর ছেলে খোকন খাঁ (৫০), তার দুই ছেলে ছাত্রদল কর্মী ফিরোজ (৩০) ও অনিক (২৪)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁদাবাজির অভিযোগে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সেনাবাহিনী লালপুর কলোনিপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ওয়ার্ড যুবদলের নেতা খোকন ও তার দুই ছেলেকে আটক করে লালপুর থানায় হস্তান্তর করে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে তাদের মুক্তির দাবিতে প্রথমে লালপুর থানার সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হন। পরে ঈশ্বরদী-বানেশ্বর আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিলে তারা পুনরায় লালপুর ত্রিমোহিনীতে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী এই অবরোধে লালপুর-নাটোর, লালপুর-ঈশ্বরদী ও লালপুর-বাঘা সড়কে চলাচলকারী শত শত যানবাহন আটকা পড়লে ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আটককৃতদের মুক্তির ব্যাপারে পুলিশের সাথে স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের সমঝোতায় সাময়িকভাবে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু আটককৃতদের ছাড়তে বিলম্ব করায় আন্দোলনকারীরা বেলা ১টার দিকে আবার সড়ক অবরোধ করেন।
বিএনপি নেতারা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি ও তার ভাই লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন আটক বিএনপি নেতা খোকনকে মারপিট করে একটি মোবাইল ফোন ভেঙ্গে দেন। গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সেই মোবাইল ভাঙচুরের ঘটনা ২০ হাজার টাকায় নিষ্পত্তি হয়। ওই টাকা লেনদেনের ঘটনা গোপনে ভিডিও করে রাখেন তারা। সেই ভিডিও ক্লিপ সেনাবাহিনীর হাতে পৌঁছালে সেনাবাহিনী লালপুরের কলোনীপাড়া থেকে খোকন এবং তার দুই সন্তান ফিরোজ ও অনিককে তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আটক করে থানায় সোপর্দ করে।
আটককৃতদের পরিবারের অভিযোগ, রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেনাবাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলে, ঘরে ঢুকে তাদের ব্যাপক মারধর করে তুলে নিয়ে যায়।
খোকনের স্ত্রী রত্না বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ও দুই সন্তানকে নির্যাতন করে নিয়ে গেছে, আমরা তাদের মুক্তি চাই।’
বিগত আওয়ামীগ সরকারের সময়ের উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. মতিউর রহমান মতি বলেন, তিনি বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর নিকট কোন অভিযোগ করেননি।
লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব হারুনার রশীদ পাপ্পু বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। একটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে সেনাবাহিনী তাদের আটক করেছে এবং মারধরও করেছে। আমরা তাদের মুক্তি চাই’।
লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুরুজ্জামান জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগে সেনাবাহিনী রাতে তিনজনকে লালপুর থানায় হস্তান্তর করেছে। তাদের মুক্তির দাবিতে সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করেছে। পুলিশ তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেয়। শনিবার দুপুরে আটককৃতদের ১৫১ ধারায় অপরাধ নিবারণকল্পে অপরাধ প্রতিরোধ আইনে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।