নাটোর প্রতিনিধি :
যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ না নেওয়া এবং ঘটনা চেপে রাখার প্রবণতা দেখানোর কারণে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে টাঙ্গাইল পুলিশ।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বিকেলে তিনি বড়াইগ্রাম থানা পরিদর্শনে যান। তখন তিনি ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। পরে তাঁকে প্রত্যাহার করে নাটোর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় যান। কিন্তু ওসি অভিযোগ নেননি, আবার বিষয়টি আমাদেরকেও জানাননি। এ ঘটনায় তিনি যথেষ্ট দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেননি। এ জন্য তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
ডিআইজি বলেন, কেন তিনি অভিযোগ নেননি; কিংবা আমাদের জানাননি-এ জন্য তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে। এ জন্য তাঁর কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে এবং প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বাসে ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে ডিআইজি বলেন, ‘আমরা ৭-৮ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আজও দুজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুনেছেন। কিন্তু ধর্ষণ কি না, তা নিশ্চিত করে তাঁরা বলতে পারেননি। তবে শ্লীলতাহানি হয়েছে, এটা বলা যায়। তারপরও আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে চারজন মহিলা যাত্রীর মোবাইল নম্বর পেয়েছি। তাঁদের কাছে মহিলা পুলিশ পাঠাব। তাঁরা পুরুষের কাছে হয়তো সব বলতে চাইবেন না। তাই মহিলা পুলিশই পাঠাব। তাঁদের কাছ থেকে ঘটনা শুনব। তারপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’
ডিআইজি বলেন, ‘টাঙ্গাইল এবং নাটোর পুলিশ যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করছে। আমরা ঘটনার ভেতর ঢুকেছি। আশা করছি দ্রুতই সবকিছু আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে এবং যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।’
এর আগে গত সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলসের ‘আমরি ট্রাভেলসের’ একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। চলন্ত বাসে ৩ ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে একই জায়গায় বাসটি ঘুরিয়ে নিয়ে গিয়ে ভোর ৪টার দিকে ডাকাতেরা নেমে যায়। এ সময় যাত্রীদের সবকিছুই লুট করা হয়। ডাকাতি ছাড়াও নারী যাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
ডাকাতির ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার, চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে ৫৪ ধারায় আদালতে তোলা হলে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। ঘটনার তিন দিন পর ডাকাতদের কবল পড়া ওমর আলী নামের এক যাত্রী শুক্রবার সকালে বাদী হয়ে এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় বাসের এক যাত্রী একটি মামলা করেন। তিনি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বাসিন্দা।
এদিকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় টাকা, মোবাইল ও দেশীয় অস্ত্র।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান। এর আগে, শুক্রবার আসামিদেরকে ঢাকার সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মানিকগঞ্জ জেলার লাউতারা গ্রামের মফিদুল ইসলাম ওরফে মুহিত, শরিয়তপুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের সবুজ এবং ঢাকার সাভার থানার টান গেন্ডা গ্রামের শরীফুজ্জামান শরীফ। তারা সবাই আন্তঃজেলার ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য।
তাদের কাছ থেকে ৩টি লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন, ১টি ছুরি, নগদ ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা জব্দ করা হয় বলে জানান পুলিশ সুপার।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৪৫ মিনিট থেকে আনুমানিক ৪টা পর্যন্ত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্তবাসে একটি ডাকাতি সংঘটিত হয়। এসংক্রান্তে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানায় একটি ডাকাতিসহ শ্লীলতাহানির মামলা রুজু হয়। মামলাটির তদন্তে টাঙ্গাইল মির্জাপুর থানা পুলিশের একাধিক অভিযানিক দল তদন্তে নামে।
গোপন তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় টাঙ্গাইল জেলার ডিবি পুলিশ মামলা রুজুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজন ডাকাতকে ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানাধীন গেন্ডা এলাকা থেকে গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য ডাকাতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের আদালতে প্রেরণের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এইচ. এম. মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী।