বুধবার | ১২ মার্চ, ২০২৫ | ২৭ ফাল্গুন, ১৪৩১

পদ্মা নদীর চরে ঢেমশি চাষে সম্ভাবনা

নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে ঢেমশি চাষ শুরু হয়েছে। প্রায় বিলুপ্ত এই ফসল তুলনামূলক কম খরচ ও স্বল্প সময়ে ফলন দেওয়ায় ঢেমশি চাষে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনযুগ পর আবারও ঢেমশি নতুন করে কৃষকের মনে আশা জাগাচ্ছে। এরই মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় এই ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশক বা তারও পূর্বে এ অঞ্চলে ঢেমশির চাষ হতো। চলতি বছরে উপজেলার বিলমাড়িয়া পদ্মা নদীর চরে ৩০ শতক জমিতে ঢেমশি চাষ হচ্ছে। এটি ব্যাপক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এবং বহুমাত্রিক দানাদার খাদ্য হিসেবে পরিচিত। এ থেকে চাল-গমের মতো আটা তৈরি হয়, আবার ঢেমশি ফুল থেকে উন্নতমানের মধুও সংগ্রহ করা সম্ভব। ফুল আসার আগে ঢেমশির পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়।
এছাড়া প্রতিবছর কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাসে ঢেমশির বীজ রোপন করে তিন মাসের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। ঢেমশি চাষে কম পরিমাণে সার বা কীটনাশক ব্যবহৃত হয়। এতে খরচও কম আবার ফসলটি উচ্চপুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ ২০২৫) সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা নদীর চরে ধানের জমির পাশে ধনিয়ার ফুলের ন্যায় ফুল ফুটেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাতাসে দোল খাচ্ছে ঢেমশির সাদা রঙের ফুল।
ঢেমশি চাষি মুনতাজ আলী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৩০ শতাংশ জমিতে ঢেমশি চাষ করেছেন। এবার ভালো ফুল এসেছে, আশা করছি ফলনও ভালো হবে। এতে প্রায় ৩ হাজার খরচ হয়েছে। বাজারে এখন প্রতি মণ ঢেমশি ৬-৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বিক্রি করলে প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো লাভ হবে। তবে এবার বিক্রি না করে আটা তৈরি করবো।’
তিনি আরো বলেন, তাঁর ঢেমশি চাষ দেখে অনেকেই ঢেমশি চাষের জন্য পরামর্শ নিচ্ছেন। তিনি নিজেও আগামী মৌসুমে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ করবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, এ বছর পরিক্ষামূলকভাবে ঢেশমি চাষ শুরু হয়েছে। কৃষক কম খরচে বেশি লাভবান হলে ভবিষ্যতে ঢেমশি চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। বিলুপ্ত প্রায় ফসলটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢেমশি চাল, আটা এবং মধু উৎপন্ন করে ঢেমশির বাজার সৃষ্টি করতে পারলে এটি আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ, গবেষক ও বিজ্ঞানী ড. মো. ওমর আলী বলেন, ঢেমশি বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় ঔষধি গুণসম্পন্ন দানা শষ্য। বহুমাত্রিক দানাদার খাদ্য জাতীয় এ ফসল থেকে শাক, চাল, আটা ও মধু পাওয়া যায়। আবার পতিত জমিতেও চাষ করা যায়। ১৯৬০ এর দশকে শুরু হওয়া ঢেমশি ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ হতো।
ঢেমশি বীজ দেখতে ত্রিকোণাকার। এর ফুল থেকে মৌমাছি পালনের মাধ্যমে প্রতি একরে ১৩০ কেজি পর্যন্ত মধু পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে ফুল আসার আগ পর্যন্ত ঢেমশি পুষ্টিকর শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। এর চাল এবং আটাতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, মিনারেল এবং ফাইবার যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, ভিটামিন (ই১, ই২, ই৩, ই৬, ই১২) ও সেলেনিয়ামসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান। এটি ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিক, এ্যাজমা, হার্টের রোগের ঝুকি কমায় বা নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি চাষে সফলতার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.