রবিবার | ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ | ৩০ চৈত্র, ১৪৩১

‘মরার বাড়ি অট্ট হাসি যেমন মানায় না, তেমনি বিয়ে বাড়িতে উচ্চ স্বরে কান্নাও বেমানান’

মো. হারুনার রশিদ পাপ্পু :
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারনে লেখলাম। আমি জানি যারা আমাকে অপছন্দ করেন তাঁরা বিভিন্নভাবে সমালোচনা করবেন, যারা পছন্দ করেন তাঁরা বেশ বেশ করবেন, সেটা বিষয় নয়। যারা আমার সমালোচনা করে আমাকে সঠিক পথ দেখান, তাদেরকে আমি আমার আপন মনে করি। আমি আমার মনের কথা বললাম। যিনি যেভাবে বুঝবেন, তিনি সেইভাবে বলবেন। এটা আপনার প্রজ্ঞা ও মানসিকতার পরিচায়ক।
আপনারা জানেন আমি রাজনীতির সাথে জড়িত আছি, আমার একটা নিজস্ব বুঝ আছে। আমি রাজনীতিকে আমার মত করে ভাবি বা করি। রাজনীতি যারা করেন- তারা শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত, ধনী, গরিব, ফর্সা, কালো, চোর, বদমায়েশ সব ধরনের মানুষের সাথে মিশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে। এদের সকলের মতামতের ভিন্নতা আছে, এই ভিন্নতাকে ঐক্যে পরিণত করাই একজন নেতার নেতৃত্ব। এখানে সকল শ্রেনীর মানুষের চাওয়া পাওয়ার ভিন্নতা আছে, কেউ অর্থ উপার্জন করতে চান, কেউ নেতা হতে চান, কেও চাকুরী চান, কেউ প্রতিবেশীকে ঘায়েল করার জন্য রাজনীতি করেন, কেউ একটি নির্দিষ্ট আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। এই চাওয়া-পাওয়া ও কর্মের সমন্বয় করাই রাজনীতি। যারা এই সমন্বয়টা সঠিক করতে পারেন তাঁরা সফল, অন্যেরা ব্যর্থ।
আমি রাজনীতিতে সফল না ব্যর্থ হব এটা আমার কর্ম বলে দিবে। আর আমি যদি বুঝতে পারি আমার সফলতা ও ব্যর্থতা তাহলে রাজনীতি সঠিক হচ্ছে বলে প্রাথমিক ধারনা করা যেতে পারে। আমার রাজনীতি করার সাথে অনেকগুলি ফ্যাক্টর কাজ করে- যেমন জনগন, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি, আদর্শ ও নীতি। সব ফ্যাক্টরগুলির সঠিক সমন্বয় ঘটাতে পারলে মোটামুটি সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এখানে রাজনীতিতে দল একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ শহীদ জিয়াউর রহমানের এই অমূল্য বানী আমাদের স্মরণ রেখে নিজের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা একজন প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক কর্মীর দায়িত্ব। কারন দল একটি প্রতিষ্ঠান। দল আমাকে ওই পর্যন্ত স্বীকার করবে, যতক্ষন আমি দলের জন্য ভাল কাজ করছি। দল যদি বুঝতে পারে আমি দলের জন্য ক্ষতিকর, দল আমাকে স্বীকার করবে না এটাই বাস্তবতা। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার মামলা লড়ার জন্য আনুমানিক ৭০০ উকিল দাড়িয়েছিলেন, ঠিক তার কিছুদিন পরে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারনে মামলায় লড়ার জন্য একজন উকিলও দাড়াননি। (আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে) এটাই বাস্তবতা। আর আমাকে এই বাস্তবতাই শিখতে হবে রাজনীতির মাঠে। একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তির বিচারক হচ্ছে জনগন। তাঁরা ঠিকই বুঝেন কার সাথে থাকতে হবে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতি, অপশাসন বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে এটাও যেমন মানুষ জানেন, তেমনই ৫ আগস্টের পরে চাঁদাবাজি করেছে, দুর্বল মানুষের উপর জুলুম করেছে, সন্ত্রাস করেছে এটাও তাঁরা জানেন এবং সেভাবেই সিদ্ধান্ত নিবেন। দল কখনও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিবে না। রাজনীতিতে জনগনের সমর্থন ছাড়া একজন রাজনৈতিক ব্যাক্তির বা দলের রাজনীতি অচল। তাই জনগনের সমর্থন আদায় করার জন্য যে ধরনের কর্মকান্ড করা প্রয়োজন সেটাই করা উচিত এবং এই ধরনের কর্মকান্ড কি সেটা বুঝতে পারা একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য পরীক্ষা। কিন্তু আমরা এই সত্যটা আড়াল করে বাস্তবতা বিবর্জিত কর্মকান্ডকে প্রাধান্য দিচ্ছি, এটাই আমাদের জন্য কাল হবে।
রাজনীতির একটা নিজস্ব ভাষা আছে, নিজস্ব নিয়ম আছে, নিজস্ব পদ্ধতি আছে, আমি এগুলি বাদ দিয়ে রাজনীতি ইচ্ছা মত করতে গেলে বিপদ নিশ্চিতঅ তিনি যত বড়ই নেতা হোক না কেন? আমরা প্রায়ই শহীদ জিয়াউর রহমানের ‘আদর্শ-আদর্শ’ বলে চিৎকার করি। কিন্তু তাঁর আদর্শ বুকে ধারণ করি না, যার কারনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়ি। আমার বিশ্বাস, যিনি শহীদ জিয়ার আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করবেন, তাঁর রাজনীতি নষ্ট হবে না। গত ৫ আগস্টের আগে বিএনপির যে ইমেজ সৃষ্টি হয়েছিল, বর্তমানে তা অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কেও স্বীকার করুক আর না করুক। এই অবস্থা থেকে আমাদের উঠে দাঁড়াতে হলে দলের চেইন অফ কমান্ড প্রতিষ্ঠিত করা অতি জরুরী। দলের ভিতরে যাঁরা দলের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত তাদের কঠোর হাতে দমন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এটা করতে ব্যর্থ হলে আমাদের কপালে দু:খ আছে। বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ রইল।
আমি বিশ্বাস করি, আমাদের প্রানপ্রিয় নেতা, অভিভাবক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটল ভাইয়ের সুযোগ্য সন্তান এ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল লালপুর-বাগাতিপাড়া বিএনপির নেতৃত্ব সঠিকভাবে দিতে পারবেন, তার লক্ষন আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ৩১ দফা সারা বাংলাদেশে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন, একজন প্রশিক্ষক হিসেবে তাঁর নিজস্ব যোগ্যতা দিয়ে। তেমনি লালপুর-বাগাতিপাড়া বিএনপির মধ্যে যে সকল অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব, প্রজ্ঞা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।

* মো. হারুনার রশিদ পাপ্পু : সাবেক সদস্য সচিব, লালপুর উপজেলা বিএনপি ও সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ, লালপুর, নাটোর।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.