নাটোর প্রতিনিধি :
ঢাকা ও রাজশাহীসহ ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও আর্থিক অনটনে জুবায়ের ইবনে আল মাহমুদের ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি নাটোরের লালপুরের ঈশ্বরদী ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের দরিদ্র রিকশাচালক কামরুজ্জামান ইমন ও গৃহিনী মোছা. সাবিনা বেগম দম্পত্তির বড় ছেলে।
মঙ্গলবার (৬ মে ২০২৫) জুবায়ের ইবনে আল মাহমুদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তিনি ঢাবি, রাবি, বুটেক্স, পবিপ্রবি, শাবিপ্রবি ও রুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তার এমন সাফল্যে এলাকাবাসী আনন্দিত হলেও দরিদ্রতার কারণে আনন্দ নেই বাবা মায়ের মনে।
জুবায়েরের বাবা কামরুজ্জামান ইমন বলেন, তার তিন ছেলে মেয়ে। ছোট মেয়ে মরিয়মের বয়স ৪ বছর। মেজো মেয়েটি সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বড় ছেলের এমন সাফল্যে অনেক খুশি হয়েছেন। কিন্তু তার পড়াশোনার খরচ চালানোর সামর্থ্য নেই। তিনি রাজশাহী শহরে অটোরিকশা চালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গত ১ বছর ধরে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে আছেন। এখন নিজের চিকিৎসা ও পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাড়ি ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই। এমন অবস্থায় কিভাবে ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাবেন বুঝতে পারছেন না।
মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়ের লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও লালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক ক্লাস করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে তাকে সংগ্রাম ও কাজ করে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তবে শিক্ষকরা সব সময়ই সাহায্য করেছেন। তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। দরিদ্রতার শৃংখল ছিন্ন করে যুদ্ধ বিমান চালক হয়ে দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করার স্বপ্ন দেখেন। তার এ স্বপ্ন পূরণে সবাইকে পাশে তিনি চান।
শিবনগর গ্রামের মো. রনি ফরাজী (৩৩) বলেন, জুবায়েরের বাবা দরিদ্র ও অসুস্থ। তার পড়াশোনার সকল দায়িত্ব রাষ্ট্রকে গ্রহণের আবেদন জানান।
এ বিষয়ে লালপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, জুবায়ের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষায় সে উপজেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে। কলেজে পড়াশোনাকালীন তাকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় অসুস্থ হয়ে উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এমন প্রতিভাবান ছেলেকে উচ্চতর শিক্ষায় সাহায্য করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে লালপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিজুল কবির বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান মহোদয় প্রশিক্ষণে থাকায় তিনি ইউএনও-র দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, ইউএনও মহোদয় প্রশিক্ষণ থেকে আসলে তাঁর সাথে আলাপ করে মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়েরের পড়াশুনার জন্য সরকারিভাবে সহায়তা প্রদানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।