নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুরে ঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেওয়া নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের মামলায় নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইসাহাক আলী, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান সরলসহ ১৭ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন ২০২৫) দুপুরে এজাহারভুক্ত ১৯ আসামি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মো. নাসিরুল হকের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান। শুনানী শেষে বিচারক ২ জনের জামিন মঞ্জুর করলেও বাকি ১৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় তাঁরা আদালতে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, ইউনুসের পতন হবেই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
কারাগারে প্রেরণকৃত এজাহারভুক্ত ১৭ জন হলেন, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসাহাক আলী, লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, লালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান সরল, নিপুন হোসেন, মো. কাজল হোসেন, মো. কায়কোবাদ, শিমুল হোসেন, আবু বক্কর, আ. মান্নান, তুষার আলী, তামিম হোসেন, সাজিদ হোসেন, রতন আলী, শান্ত আলী, এনামুল হক ও পিয়াস আলী।
জজ আদালত সূত্রে জানা যায়, লালপুর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ১৯ আসামি বৃহস্পতিবার দুপুরে দায়রা জজ আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। তাঁদের আইনজীবী মো. আতিকুল্লাহ বিশ্বাস গ্যাদা আদালতের কাছে আসামিরা নির্দোষ বলে দাবি করেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় তাঁরা সেখানে ছিলেন না। রাজনৈতিক হয়রানির অংশ হিসেবে তাঁদের আসামি করা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল হাইকোর্টে হাজির হয়ে তাঁরা আট সপ্তাহের অন্তর্বর্তী জামিন নিয়েছিলেন। তাঁরা জামিনের কোনো অমর্যাদা করেননি।
অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রুহুল আমিন তালুকদার টগর ও অতিরিক্ত কৌঁসুলি আব্দুল খালেক আসামিদের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, আসামিদের মধ্যে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ইসাহাক আলী ও লালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর সিদ্দিক পলাশ রয়েছেন। তাঁরা ধর্মীয় একটি সমাবেশে নিষিদ্ধ স্লোগান ও গুলিবর্ষণ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন।
শুনানী শেষে বিচারক বালিতিতা রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মো. বাবুল হোসেনের ছেলে শিশির আলী ও মৃত মজু খামারুর ছেলে শাফি ইসলামের জামিন মঞ্জুর করলেও বাকি ১৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ সময় তাঁরা আদালতে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, ইউনুসের পতন হবেই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ, ২০২৫ উপজেলার লালপুর রামকৃষ্ণপুর চিনি বটতলা ঈদগাহ এলাকায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষন করে। এতে বিএনপি কর্মী মো. শরিফুল ইসলাম সুজাতসহ ৫ জন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় ওইদিন রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত বিএনপি কর্মী বালিতিতা রামকৃষ্ণপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম সুজাতের বাবা মো. আরজেল আলী বাদি হয়ে লালপুর থানায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০-১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার জামিনের মেয়াদ শেষে আদালতে আত্মসমর্পণ ও নতুন করে জামিন প্রার্থনাকালে বিচারক তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।