আহসানুল আরেফিন :
সবুজা খালা (সবুজা বেগম)-মাইলস্টোন কলেজের একজন নীরব কর্মী, একজন আয়া, যাঁর নি:স্বার্থ সাহসিকতা এখন দেশের মানুষের হৃদয়ে। সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার সময় তিনি নিজেকে বাঁচিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু ভিতরে আটকে থাকা শিশুদের কান্না শুনে তিনি বার বার আগুনে ফিরে যান-একজনের পর একজনকে উদ্ধার করেন-শেষ পর্যন্ত তাঁকে পাওয়া যায় অগ্নিদগ্ধ ও অচেতন অবস্থায়।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনার খবর আলোচনার কেন্দ্রে আসে, যখন শিরিন সাজমিলা ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন-এর নির্বাহী পরিচালক সাজিদান রাফসান ফেসবুকে তাঁর গল্প শেয়ার করেন। সেই পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয়, প্রায় ২০ হাজার বার শেয়ার হয় এবং শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এই বীরাঙ্গনার গল্প তুলে ধরে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ন ইউনিটের আইসিইউ-৫-এ ভর্তি হওয়ার পর থেকেই, আহসানুল আরেফিন ও তাঁর নেতৃত্বে থাকা ফাউন্ডেশনের টিম সবুজা খালার চিকিৎসা ও পরিবারের পাশে রয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সবুজা খালার সঙ্গে শিরিন সাজমিলা ফাউন্ডেশনের টিম, মাইলস্টোন দুর্ঘটনার পর।
আহসানুল আরেফিন জানান, ‘তাঁর স্বামী মাত্র ৪৩ দিন আগে কিডনির জটিল রোগে মারা যান। গত ১৬ বছর ধরে মাইলস্টোন কলেজে কাজ করে তিনিই পরিবার চালাতেন-অসুস্থ স্বামী ও বিধবা মেয়ে রুমানাকে নিয়ে।’
মেয়ে রুমানা বলেন, ‘আজ দেশের মানুষ আমার মায়ের বীরত্ব জানে শুধু সাজিদান ভাই ও ফাউন্ডেশনের জন্য। আমি দোয়া চাই এবং আশা করি সরকার আমার মাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানাবে। আমি চাই, এই ফাউন্ডেশন যেন অন্য আয়া ও নিম্নআয়ের কর্মীদেরও খুঁজে পেলে পাশে দাঁড়ায়।’
শিরিন সাজমিলা ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ভুক্তভোগী ও আহতদের শনাক্ত করছে, যাতে কেউ সরকারী সহায়তা থেকে বাদ না পড়ে।
গত এক দশকে, ফাউন্ডেশনটি দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করেছে-প্রতিবন্ধী সেবা, দরিদ্র কৃষকের পুনর্বাসন, নারীদের জন্য ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা এবং উপজাতীয় শিল্প সংরক্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছে।
২০২৪ সালে তারা জুলাই আন্দোলনের শহিদ ও আহতদের সহায়তা এবং ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালীতে ১০ হাজার বন্যার্তের জন্য জরুরি ত্রাণ পরিচালনা করেছে।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বার্তা:
যদি আপনার আশেপাশে মাইলস্টোন দুর্ঘটনার কোনো ভুক্তভোগী থাকেন, দয়া করে আমাদের জানান। আমরা চাই না কেউ উপেক্ষিত থাকুক। আমরা পাশে থাকবো এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য লড়াই চালিয়ে যাবো। দোয়া রাখবেন।
* আহসানুল আরেফিন: শিরিন সাজমিলা ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন টিম।