বৃহস্পতিবার | ৩ অক্টোবর, ২০২৪ | ১৮ আশ্বিন, ১৪৩১

খাল খননে বিনা মূল্যে দুই কৃষক জমি দান

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বর্ষা এলেই নাটোরের বড়াইগ্রাম, লালপুর এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছয়টি মৌজার দুই হাজার একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকে। পানি নামার পথ না থাকায় পুরো এলাকায় সৃষ্টি হতো জলাবদ্ধতার। বিনা পয়সায় দুই কৃষকের দেওয়া জমিতে খাল খননের মাধ্যমে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন এলাকার মানুষ।
রোববার (১৫ অক্টোবর ২০২৩) এই কর্মযজ্ঞ শেষ হয়। এতে হাসি ফুটেছে হাজারো কৃষকের মুখে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারী বৃষ্টিপাত হলেই বড়াইগ্রামের দৌলতপুর ও কচুয়া, লালপুরের মহেশ্বর, টিটিয়া, মাঝগাঁও এবং ঈশ্বরদীর সুন্দরবাড়ি মৌজার দুই হাজার একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যেত। মাত্র ৪০০ মিটার খাল খনন করা হলেই এসব পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব ছিল। তবে এ জন্য খাসজমির পাশাপাশি দৌলতপুরের শামসুল ইসলামের দেড় বিঘা ও ইসমাইল হোসেনের বাড়ির ভিটার দুই শতক জমির প্রয়োজন ছিল। সম্প্রতি অতি বৃষ্টিতে এলাকাটি আবারও পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে সমস্যাটি তুলে ধরেন।
খবর পেয়ে ইউএনও আবু রাসেল ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শামসুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। জনস্বার্থে তাঁদের কিছু জমিতে খাল খননের অনুমতি চান। এতে সম্মত হন ওই দুই ব্যক্তি। পরে ইউএনও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরামর্শ করে শুক্রবার থেকে দুই মিটার প্রশস্ত ৪০০ মিটার দীর্ঘ খালটির খনন শুরু করেন। প্রশাসনের খরচে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে দিন-রাত খালটি খননের কাজ রোববার শেষ হয়।
জলাবদ্ধতার কারণে মাঝগ্রামের কৃষক আতাউর রহমানের ১৭ বিঘা জমিতে ফসল ফলানো যেত না। দৌলতপুরের কাদের মল্লিকের ৬ বিঘা, রহিজ ভূঁইয়ার ৫ বিঘা, আবদুস সোবহানের ১৫ বিঘা ও রশিদ ভান্ডারির ১০ বিঘা জমিও ছিল অনাবাদি। আলাপকালে এই কৃষকেরা বলেন, খাল খননের ফলে এখন আর জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না। সারা বছরই তাঁরা ফসল ফলাতে পারবেন। ব্যক্তিগত জমিতে খাল খনন করতে দেওয়ায় তাঁরা শামসুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একইসঙ্গে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ায় ইউএনওকেও ধন্যবাদ জানান তাঁরা।
গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক বলেন, শামসুল ইসলামের দেড় বিঘা আর ইসমাইলের বাড়ির ভিটার দুই শতাংশ জমি জনস্বার্থে খাল খনন করতে দেওয়ায় ছয় গ্রামের হাজারো মানুষের দুঃখের অবসান হয়েছে।
দুই কৃষককে ধন্যবাদ জানিয়ে ইউএনও আবু রাসেল বলেন, খাল খননের জমি দেওয়ার জন্য দুজন কৃষককে রাজি করানোটা ছিল চ্যালেঞ্জ। সেটা করতে পেরেছেন। এই সেবা তাঁরা অব্যাহত রাখবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
জমিদাতা শামসুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও একজন কৃষক। এলাকার পানি বের করে দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় আমার মতো শত শত কৃষক কষ্ট করছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। বিষয়টি আমার মনে লেগেছে। তাই ইউএনও সাহেব যখন আমার জমিতে খাল কাটার অনুমতি চাইলেন তখন না বলতে পারিনি। আমি খুশি মনেই জমি ছেড়ে দিয়েছি।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.