সোমবার | ১১ আগস্ট, ২০২৫ | ২৭ শ্রাবণ, ১৪৩২

অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার রাগ ও ক্ষোভে গলা কেটে হত্যা: আটক তাওহিদুলের জবানবন্দি

নাটোর প্রতিনিধি :
অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার রাগ ও ক্ষোভে নাটোরের লালপুরে প্রাইভেট কারে সাইদুর রহমান (৩৫) নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃত মো. তাওহিদুল ইসলাম নামে (২০)।
নাটোর জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে এসপি মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত তাওহিদুল ইসলাম নিহত ড্রাইভার সাইদুর রহমানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, সাইদুর রহমান অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। সেই রাগ ও ক্ষোভে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করেছেন বলে জানান তিনি। তবে হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পুলিশ অধিকতর তদন্ত অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন এসপি।
গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট ২০২৫) দিবাগত রাত ১০টার দিকে লালপুর-বনপাড়া আঞ্চলিক সড়কের উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুলের পাশে তাকে গলা কেটে হত্যা করে। নিহতের সঙ্গে থাকা মোবাইল ও কাগজপত্র থেকে জানা যায়, তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দক্ষিণ রেলগেট এলাকার বামনপাড়া গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে। তিনি একজন পেশাদার ড্রাইভার।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মো. আলমগীর হোসেন (৩৩) বাদি হয়ে লালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বাহেরমালী গ্রামের মহিদুল ইসলামের ছেলে মো. তাওহিদুল ইসলাম (২০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুলসংলগ্ন রাস্তার পাশে থেমে থাকা একটি প্রাইভেট কার থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় দূর থেকে তাঁরা এগিয়ে এসে গাড়ির পাশে রাস্তায় গলা কাটা অবস্থায় এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরা পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে লালপুর থানা পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট কার (খুলনা মেট্রো-ক-০২-০১৮০), মোবাইল ফোন, একটি ধারালো চাকু ও কিছু কাগজপত্রসহ লাশ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোবাইল ও কাগজপত্র থেকে নিহতের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এ সময় সেখানে সাদা গেঞ্জি গায়ে অপরিচিত এক ব্যক্তিকে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে দেখে তাকে আটক করেন স্থানীয়রা। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়।


নিহত সাইদুর রহমানের স্ত্রী তানিয়া খাতুন (৩৬) বলেন, সাইদুর রহমান খুব ছোট থেকে প্রাইভেটকার চালাতেন। তিনি ২০ বছর ধরে প্রাইভেটকার চালানো ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। শুরুর দিকে তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট তহিদুল ইসলামের গাড়ি চালাতেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে সে পেশা বাদ দিয়ে তিনি প্রাইভেটকার ড্রাইভিংয়ের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। এজন্য তিনি এলাকায় ড্রাইভার ওস্তাদ নামে পরিচিত ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে তিনি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করতেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে তিনি মুঠোফোনে তাকে জানান, কুষ্টিয়া থেকে বনপাড়ায় এক যাত্রীকে ভাড়ায় নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পথিমধ্যে ফোনে একবার স্ত্রীকে জানান, রাস্তা ভাঙ্গা থাকায় তিনি লালপুর-গোপালপুর হয়ে যাত্রীকে বনপাড়া নিয়ে যাবেন। পরে জানতে পারেন তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আহাজারি করে বলেন, আমার তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে কিভাবে চলবো? কি করব? কিছুই বুঝতে পারছি না। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুজ্জামান এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের গলায় ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে লালপুর হয়ে বনপাড়া যাওয়ার পথে প্রাইভেট কারে থাকা দুর্বৃত্ত যাত্রী চাকু দিয়ে তাকে গলা কেটে হত্যা করেছে। পুলিশের একাধিক টিম প্রকৃত ঘটনা তদন্তে মাঠে রয়েছে। নাটোর সদর হাসপাতাল মর্গে লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.