নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটলের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট ২০২৫) উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামে নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটলের বাড়িতে ও পারিবারিক কবরস্থানে এ আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, মরহুম ফজলুর রহমান পটলের বড় ছেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নাটোর জেলা শাখার সদস্য, লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, লালপুর থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. আশরাফুল আলম লুলুর সভাপতিত্বে ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক কালুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার পারুল, গোপালপুর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান, ওয়ালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম, উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বিশু, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আসলাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মুনসুর রহমান, এবি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি জামিল হোসেন রানা, দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান, দুয়ারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ইসমাইল হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মাঈনুল হক বিপ্লব, লালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এ্যাড. ফিরোজ হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক রায়হান কবির সুইট, যুগ্ম আহবায়ক মিলন আলী, বাগাতিপাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আনছার আলী মন্ডল, বাগাতিপাড়া ছাত্রদলের আহবায়ক সোহেল রানা, লালপুর ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক শহিদুল ইসলাম, লালপুর সদর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক আশিকুর রহমান আশিক ও যুগ্ম আহবায়ক সজিবুল ইসলাম সজীবসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
অপর দিকে লালপুর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সাবেক মন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটল সাহেবের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও লালপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ পাপ্পু।
উপস্থিত ছিলেন লালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম, লালপুর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু রায়হান, লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ডা. রফিকুল ইসলাম, লালপুর উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান মুক্তি, লালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলম মুকুল, লালপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল বাশার প্রমুখ। এ সময় লালপুর ইউনিয়ন বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও লালপুর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুসল্লিগণ।
ফজলুর রহমান পটল
নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার গৌরিপুর গ্রামে ১৯৪৯ সালে ২৪ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন ফজলুর রহমান পটল। তিনি নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে চার মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ও জেলার প্রথম মন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।
বাবা মরহুম আরশাদ আলী (লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন) এবং মাতা ফজিলাতুন নেছা। পাঁচ ভাই ও এক বোনের পরিবারে তিনিই ছিলেন সবার বড়। তিনি পাবন-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদ এডভোকেট আমিন উদ্দিনের ভাতিজা।
তিনি ১৯৮৪ সালের ১৪ মে কামরুন্নাহার শিরিনের (সাবেক অধ্যক্ষ) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের বড় ছেলে ইয়াসির আরশাদ রাজন (লালপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক, একজন চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি); ছোট ছেলে ইস্তেখার আরশাদ প্রতীক একজন ব্যবসায়ী; বড় মেয়ে ফারহানা শারমিন কাকন গৃহীনি এবং ছোট মেয়ে ফারজানা শারমিন পুতুল (বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য, বিএনআরসি এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী)।
তিনি লালপুর উপজেলার গৌরিপুরে প্রাথমিক ও গৌরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় হতে অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। পরবর্তীতে পাবনার রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যামিক পাস করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
ফজলুর রহমান পটল ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে তিনি মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ দিন বিএনপির প্রচার সম্পাদক ছিলেন। এরপর তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চার মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের শাসনামলে যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন, এরপর ১৯৯৩ সালে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর চার দলীয় জোট সরকারের সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি লালপুরে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্টেডিয়াম, রাস্তাঘাট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা উন্নয়ন মূলক কাজ করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী আবু তালহার নিকট পরাজিত হন। কিডনির জটিল রোগে রবীন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।