নাটোর প্রতিনিধি :
দীর্ঘদিন ধরে নীরব পড়ে থাকা নাটোরের লালপুর উপজেলা স্টেডিয়াম যেন আবারও শ্বাস নিল প্রাণভরে। যে মাঠে বহুদিন কোনো বড় খেলার আয়োজন হয়নি, সেখানে আবারও ভিড় জমল শত শত দর্শকের। মুখর হয়ে উঠল গ্যালারি, বেজে উঠল বাঁশি আর করতালির ঢেউ। খেলাকে ঘিরে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের একরাশ হতাশা সেদিন উবে গেল উচ্ছ্বাসে, রূপ নিল এক মহা উৎসবে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে নাটোর জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে লালপুর স্টেডিয়ামে নক আউট পর্বের খেলায় মুখোমুখি হয়েছিল লালপুর উপজেলা দল ও বড়াইগ্রাম উপজেলা দল। খেলার শুরু থেকেই ছিল উত্তেজনা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রথমার্ধেই বড়াইগ্রাম এগিয়ে যায় এক গোলে। গ্যালারিতে তখন খানিকটা নীরবতা। তবে সেই নীরবতা ভেঙে যায় দ্বিতীয়ার্ধে লালপুরের সমতাসূচক গোলের সঙ্গে সঙ্গেই। সমর্থকদের চিৎকারে কেঁপে ওঠে গ্যালারি। নির্ধারিত সময় শেষে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ১-১। এরপর খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানেই ভাগ্য হাসল বড়াইগ্রামের পক্ষে। তারা পরপর চারটি শট সফলভাবে জালে জড়ায়, কিন্তু লালপুর করতে পারে মাত্র দুটি। ফলে ৪-২ গোলের ব্যবধানে বড়াইগ্রাম মাঠ ছাড়ে বিজয়ী হয়ে।
তবে আসল জয়ের গল্প লেখা হচ্ছিল মাঠের বাইরে। দীর্ঘ বিরতির পর উপজেলা স্টেডিয়ামে খেলা ফেরায় স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অদ্ভুত এক উচ্ছ্বাস। অনেকে বলছিলেন, এই মাঠে আরেকটু নিয়মিত খেলার আয়োজন হলে তরুণরা মাঠমুখী হবে, পা বাড়াবে না ভুল পথে, যাবে না মাদকের কাছে। খেলাকে ঘিরে শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ-সবাই মেতে ওঠেছিল আনন্দে। মনে হচ্ছিল, লালপুর আবারও ফিরে পেয়েছে তার হারানো ক্রীড়ানন্দ।
মাঠে উপস্থিত ছিলেন নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আরিফ হোসেন, লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান, বড়াইগ্রামের ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস, লালপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবীর হোসেনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গ্যালারিতে বসে তারা খেলোয়াড়দের প্রাণপণ লড়াই দেখেছেন, উপভোগ করেছেন দর্শকদের উচ্ছ্বাস।
খেলা শেষে দর্শকদের দাবি ছিল একটাই-লালপুর স্টেডিয়ামে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা হোক। আর চাওয়া ছিল খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। খেলাধুলা শুধু আনন্দ দেয় না, সমাজকেও রাখে সুস্থ আর ঐক্যবদ্ধ।
এদিন লালপুর দল হারলেও জিতে গেছে ফুটবল। স্থানীয়রা ফিরে পেয়েছেন হারানো খেলার উল্লাস। ফুটবলের সুর আবার বেজে উঠেছে মাঠে, আর স্থানীয়দের হৃদয়ে জেগে উঠেছে আশার আলো। লালপুর স্টেডিয়াম আবারও হয়ে উঠুক সকলের গর্ব, প্রাণের খেলার মঞ্চ।