শনিবার | ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ২৯ ভাদ্র, ১৪৩২

আবারও সক্রিয় বৈদ্যুতিক মিটার চুরি চক্র, চিরকুটে নাম্বার দিয়ে বিকাশে টাকা দাবি

নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে আবারও অভিনব কায়দায় রাতের আঁধারে তিনটি বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে চুরি করার পর মিটারের বোর্ডগুলোতে একটি চিরকুটে মোবাইল নাম্বার (০১৫৮৫৯৯৬৮০৮) লিখে রেখে যায় চোর চক্র। সেই নম্বরে যোগাযোগ করলে চোরেরা বিকাশে ৭ হাজার টাকা পাঠানোর শর্তে মিটার ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ভোরে উপজেলার লালপুর ও গোপালপুর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা হলেন-উপজেলার লালপুর ইউনিয়নের ছয়রাস্তা মোড়ের মো. আহসান আলীর ছেলে মো. আনারুল ইসলাম (৪৮), ২ নং ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চামটিয়া গ্রামের মৃত সফেরউদ্দিন মন্ডলের ছেলে গৌরীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. হজরত আলী (৬১) এবং ভাটপাড়া গ্রামের মৃত প্রভাস চন্দ্র আশের ছেলে পলাশ চন্দ্র আশ (৩৯)।
বিষয়টি জানতে মিটারের বক্সে ঝুলিয়ে রাখা চোরের প্রদত্ত নাম্বারে ফোন দিলে তারা বিষয়টি স্বীকার করে জানান, শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে নাটোরের লালপুর ও পাবনার দাশুড়িয়া অঞ্চলে ৩১টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করেছেন। এর মধ্যে লালপুরের ৫টি মিটার রয়েছে। এ সময় তারা প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছেন বলে জানান। টাকা দিলে মিটার ফেরত দেবেন বলে বিকাশ (০১৭৯৭০১৫০৯০-পার্সোনাল, ০১৩২৭৭২২৩৪৪-এজেন্ট) নাম্বার দেন তারা। প্রতিটি মিটারের জন্য তারা ৭ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিলেই নির্দিষ্ট স্থান থেকে চুরিকৃত মিটারটি সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়াও তারা বলেন, রাজশাহীর কাটাখালিতে তাদের বাড়ি। এ কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় সহযোগিতার জন্য তাদের লোক রয়েছে।


লালপুর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বিন্দু এন্টারপ্রাইজ রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ভুক্তভোগী পলাশ চন্দ্র আশ জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে রাইস মিল বন্ধ করে বাড়িতে যান। সকাল ৮টার দিকে রাইস মিলে গিয়ে দেখতে পান বৈদ্যুতিক মিটার নেই। তবে মিটারের বোর্ডে একটি চিরকুটে মোবাইল নাম্বার লেখা ছিল। যোগাযোগ করলে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মিটার ফেরত দেওয়ার জন্য বিকাশে ৭ হাজার টাকা দাবি করেন।
একই কথা জানান লালপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স সংলগ্ন ভাঙ্গারি কারখানার মালিক মো. আনারুল ইসলাম। তিনি আরও জানান, বৈদ্যুতিক মিটার চুরির বিষয়টি বিদ্যুৎ অফিসে জানানো হয়েছে। তারা নতুন মিটার কিনে নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলেছেন।
গৌরীপুর স্কুল ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. হযরত আলী বলেন, গোপালপুর বাজারে তাঁর একটি দোকান ওয়ার্কসপ হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। গত রাতে দোকান বন্ধ করে চলে গেলে মিটারটি চুরি করেছে চোরেরা। বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জানানো হয়েছে। তারা থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। দ্রুত থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ লালপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রেজাউল করিম বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ কাজগুলো করছে। তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মিটার চুরি ঠেকাতে গ্রাহকদের সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।
এ বিষয়ে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে গত বছর (২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর) উপজেলার সালামপুর ও সাইপাড়া গ্রাম থেকে দুইটি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করা হয়েছিল। সেখানে চোরেরা মোবাইল নাম্বার লিখে যান। এছাড়াও প্রতিনিয়ত এই চক্র প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থানে মিটার চুরি করে টাকা দাবি করছেন। টাকা দিলে মিটার ফেরৎ দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.