নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের বড়াইগ্রামে পারিবারিক ক্ষোভ ও স্বর্ণালঙ্কারের লোভে দাদি মমতাজ বেগমকে (৭০) টর্চলাইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় তাঁর নাতনি ফাউজিয়া খাতুন (১৯) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে ফাউজিয়া স্বীকার করেন, দাদির শরীর থেকে স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম (সুমন) এর আদালত এই জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ফাউজিয়া খাতুন বনপাড়া পৌর এলাকার সর্দারপাড়ার শাহিনুজ্জামান শাহিনের মেয়ে। তিনি প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও গ্রামের ওয়াহেদুল ইসলামের ছেলে ইলেকট্রিশিয়ান মিনারুল ইসলামকে (২৫) দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম তারিক শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌর এলাকার সর্দারপাড়ায় নিজ বাড়িতে মমতাজ বেগমকে রক্তাক্ত ও মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত মমতাজ বেগম প্রয়াত প্রকৌশলী এস এম শফিউল্লাহর স্ত্রী। তাঁর মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
ঘটনার পরদিন তাঁর ছেলে জাকির হোসেন মঞ্জু অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ মাঠে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানতে পারে, ঘটনার সময় বৃদ্ধার বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন তাঁর ভাশুরের নাতনি ফাউজিয়া খাতুন।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, “স্বামীকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করায় ফাউজিয়ার সঙ্গে তার দাদির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। তাছাড়া বাড়ির কিছু জিনিসপত্র চুরির অভিযোগে মমতাজ বেগম তাঁকে বকাঝকা করে বাড়িতে আসা নিষেধ করেছিলেন। এসব কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে ফাউজিয়া এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।”
পুলিশ সুপার আরও বলেন,“ঘটনার দিন রাতে বাড়ির প্রহরী এশার নামাজ পড়তে গেলে ফাউজিয়া দাদির ঘরে প্রবেশ করে। দাদি তাঁকে এবং তাঁর স্বামী মিনারুলকে ওই বাড়িতে থাকতে দিতে রাজি না হওয়ায় ফাউজিয়া হাতে থাকা টর্চলাইট দিয়ে দাদির মুখে উপর্যপুরি আঘাত করেন। এতে মমতাজ বেগম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ও ঘটনাস্থলেই মারা যান।”
এরপর ফাউজিয়া দাদির শরীরে থাকা প্রায় সাড়ে তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার (চেইন, বালা, চুড়ি, আংটি) খুলে নিয়ে নাটোর শহরে চলে যান। পরে স্বামী মিনারুলের সহায়তায় ওই স্বর্ণ বিক্রি করে নতুন কাপড় কেনেন এবং ঢাকায় পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের সময় ফাউজিয়া ঘটনাস্থলে ছিলেন। পরে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভোরে নাটোর শহরের হরিশপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফাউজিয়া ও তাঁর স্বামী মিনারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ফাউজিয়া হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কিছু স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি ক্লুলেস মনে হলেও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও নিবিড় অনুসন্ধানের মাধ্যমে মাত্র তিন দিনের মধ্যেই আমরা হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। ফাউজিয়া ও তাঁর স্বামী মিনারুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইফতে খায়ের আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমীন নেলীসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।
সম্পাদনায়: রাশিদুল ইসলাম রাশেদ
সাব এডিটর, দৈনিক প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ