মঙ্গলবার | ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ২৯ আশ্বিন, ১৪৩২

পৃথক জনসংযোগ চালালেও ভোটের মাঠে ঐক্যবদ্ধ হবেন বিএনপি নেতারা, চমক দেখাতে চায় জামায়াত

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক:

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নাটোর-১ (লালপুর -বাগাতিপাড়া) আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী  আলোচনা। দোকান-পাট, হাট-বাজার, চায়ের আড্ডা – সবখানে পাওয়া যাচ্ছে ভোটের আওয়াজ। দুইটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯২ জন। ২০১৪ তে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, ২০১৮ তে দিনের ভোট রাতে ও ২০২৪ এর ডামি ভোটের কারণে বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারায় আগামী নির্বাচনে  ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন এখানকার সাধারণ ভোটাররা। এদিকে ১৯৯১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ধরে রাখা এ আসনটি পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর বিএনপি। দলের চারজন মনোনয়ন প্রার্থী পৃথক জনসংযোগ চালালেও ভোটের মাঠে ঐক্যবদ্ধ হবেন তারা।

এদিকে পতিত আওয়ামী লীগ না থাকায় আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন জামায়াতে ইসলামী। একক প্রার্থী হিসেবে উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। দলের ভোটব্যাংক বৃদ্ধিতে জনসংযোগ করে মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি। ভোটের মাঠে দেখাতে চান চমক। দুর্নীতি ও চাঁদাবাজ মুক্ত দেশ গড়ে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর জামায়াতে ইসলামী বলে জানান তিনি। মাওলানা কালাম আরও বলেন,  ইতোমধ্যে দুটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিটের কমিটি গঠন করেছে। ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রীসেনার পাশাপাশি গঠন করা হয়েছে  নতুন সহযোগী সংগঠন যুব বিভাগ। এতে দলীয় জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় সহযোগী সদস্য, কর্মী ও রোকন সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিটি সভা-সমাবেশ, সেমিনার ও সামাজিক কার্যক্রমে থাকছে কেন্দ্র ঘোষিত নির্বাচনী এজেন্ডা। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে সব ধরনের হিসাব নিকাশ ও প্রস্তুতি নিয়ে  এগোচ্ছে দলটি।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাপ ও জনসংযোগ করে যাচ্ছেন বিএনপি’র সম্ভাব্য ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক এড. তাইফুল ইসলাম টিপু, প্রয়াত যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের ছেলে ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন ও কন্যা এড. ফারজানা শারমিন পুতুল এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য (সংরক্ষিত নারী আসন-৪১) সৈয়দা আসিয়া আশরাফী পাপিয়া। দলীয় মনোনয়ন পেলে তারা সকলেই আসনটি বিএনপিকে উপহার দেয়ার কথা বলছেন। তবে দল যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ দল। এখানে একাধিক প্রার্থী থাকা খুব স্বাভাবিক। যোগ্যরা মনোনয়ন চাইবেন এতে দোষের কিছু নেই। এখন পৃথক পৃথক জনসংযোগ চালালেও আমরা সবাই ধানের শীষের কর্মী। সুতরাং দলের স্বার্থে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকবো।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক এড. তাইফুল ইসলাম টিপু প্রাপ্তিপ্রসঙ্গকে বলেন, রাজনৈতিক জীবনের ৪৩টি বছর দলের অনুগত কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। আওয়ামী লীগের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে গত ১৭ বছর দল ও নেতাকর্মীদের দুর্দিনে পাশে থেকেছি। জেল খেটেছি। ছাত্র রাজনীতি থেকে এই দলের জন্য কপালের রক্ত দিয়েছি। দুর্দিনে লড়াই সংগ্রাম করে যে কয়েকজন ঢাকার রাজপথে ছিল, আমি তাদের একজন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এই জ্বালাময়ী সংগ্রামকে যদি দল মূল্যায়ন করে, তাহলে আমি তার হকদার। এখন এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক ভাবমূর্তি আমার মূল শক্তি। দল আমাকে সুযোগ দিলে সততার সাথে কাজ করে লালপুর-বাগাতিপাড়াকে উন্নয়নের রোল মডেল বানাবো ইনশাআল্লাহ।

প্রয়াত যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের ছেলে ও নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন প্রাপ্তিপ্রসঙ্গকে বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভিপি ছিলাম। এরপর দলীয় সকল দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছি। আগামী নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দিবে ইনশাআল্লাহ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তিনি জানান, বিজয়ী হয়ে এ অঞ্চলে কৃষির উন্নয়ন, নতুন প্রজন্মের চাহিদা পূরণ, সুগার মিলের আধুনিকায়ন, আখচাষীদের নায্য হিস্যা নিশ্চিতকরণ  ও তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবেন তিনি। এছাড়া তার নিজের কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে, যা তিনি বাস্তবায়ন করবেন।

নির্বাচনে প্রয়াত যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটলের কন্যা ও নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিস্টার  ফারজানা শারমিন পুতুলও আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর ২০১৬ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছি। দলের দেওয়া প্রতিটি দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করে ইতোমধ্যে দলের আস্থা অর্জন করেছি। নারী প্রার্থী হিসেবে আমার স্বচ্ছ ও ইতিবাচক রাজনৈতিক ভাবমূর্তির কারণে দল আমাকে অগ্রাধিকার দিবে বলে বিশ্বাস করি। নির্বাচিত হয়ে বাবার অসম্পূর্ণ কাজগুলো শেষ করতে চাই। মাদক, সন্ত্রাস ও অবৈধ হ্যাকিং কার্যক্রম নির্মূল করা হবে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাবলম্বী করা হবে। দলের নেতা কর্মীদের এক সুতোয় গেঁথে আগামী নির্বাচন করবো ইনশাআল্লাহ।

সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিয়া আশরাফী পাপিয়া বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এক সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করতে কাজ করেছি। রাজপথে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে এখন পর্যন্ত দল ও দেশের জন্য লড়াই করছি। এখন জন্মভূমি লালপুর-বাগাতিপাড়ার ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে চাই। শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বদ্ধপরিকর তিনি। এছাড়া দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির পরিবর্তে সৎ, যোগ্য, পরিচ্ছন্ন ত্যাগী নেতাদের নিয়ে তিনি তৃণমূলে শক্তিশালী রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা দিয়েছেন। দলের প্রতি তার নিবেদন ও আনুগত্যের কারণে দল তাকে মনোনয়ন দিবেন বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

এছাড়া আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এলাকায় জনসংযোগ করছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ব্যাংকিং ও বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক সহ সম্পাদক ও নাটোর জেলা কমিটির সদস্য সচিব এএসএম মোকাররেবুর রহমান নাসিম। তিনি বিজয়ী হয়ে কাজের মাধ্যমে উন্নয়ন দেখাতে চান। ভোটারদেরকে প্রতীক দেখে নয়, বরং প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) থেকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিন যুব অধিকার পরিষদের সাবেক সহ-সভাপতি ও আসন্ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মেহেদি হাসান সোহাগ। তবে এলাকায় তাকে এখনো কোনো গণসংযোগ করতে দেখা যায় নি। তিনি প্রাপ্তিপ্রসঙ্গকে জানান, চলতি মাসের শেষ কিংবা নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। যুব সমাজের দেশপ্রেম, সচেতনতা, মেধা শক্তি ও সমর্থন তাদের মূল শক্তি জানিয়ে তিনি বলেন, তথাকথিত উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির পরিবর্তে আমরা বাস্তবভিত্তিক উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা সাজিয়েছি। তরুণ ভোটাররা তাদেরকে সমর্থন দেবেন বলে আশা করেন তিনি।  নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জয় লাভের জন্য কাজ করছেন তারা। পরে বলেন, জয়-পরাজয় যাই হোক- তিনি এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যেতে চান। নির্বাচিত হলে তিনি লালপুরের স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিবেন।

এদিকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক লন্ডন প্রবাসী ড. আজাবুল হক খেলাফত মজলিস থেকে নির্বাচন করবেন। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিয়েছেন। তবে এখনো পর্যন্ত খেলাফত মজলিসকে কোন জনসংযোগ করতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন একধরনের ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক চক্রে আবদ্ধ। তাঁর স্বপ্ন- এই চক্র ভেঙে গণতান্ত্রিক, উন্মুক্ত ও চিন্তাশীল রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। এমন একটি বাংলাদেশ গড়বেন – যেখানে দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে সবার সমান সুযোগ ও মর্যাদা থাকবে। কেউ রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার শিকার হবে না। তিনি বিশ্বাস করেন – নতুন প্রজন্ম ও মুক্তচিন্তার তরুণরাই ভবিষ্যৎ রাজনীতির দিশা দেখাবে। ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করবে। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ আমাকে দু’হাত ভরে দিয়েছেন। এখন মৃত্যুর পূর্বে দেশের গরীব মেহনতি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কিছু করতে চাই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সিঙ্গাপুরের আদলে উন্নত মানের করতে চান তিনি।

তবে নির্বাচনের এই ডামাডোলের মধ্যেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রচার প্রচারণা এখনো শুরু হয় নি। উপজেলা দুটিতে তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমও দেখা যাচ্ছে না।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.