রবিবার | ৯ নভেম্বর, ২০২৫ | ২৪ কার্তিক, ১৪৩২

বিএনপির প্রার্থী নিয়ে উত্তেজনা, লালপুরে সড়ক অবরোধ

ডেস্ক রিপোর্ট:

নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুলের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেছে একই আসনে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী এবং জেলা বিএনপির সদস্য ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজনের সমর্থকরা।
শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে রাজন সমর্থকরা এক বর্ণাঢ্য র‍্যালি বের করেন। র‍্যালিটি লালপুর ত্রিমোহনী চত্বরে পৌঁছালে তা বিক্ষোভ মিছিলে রূপ নেয়। পরে তারা বাঘা–লালপুর–ঈশ্বরদী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ রাখে।
বিক্ষোভ চলাকালে সমর্থকরা “যে টিকিট কর্মী মারে, সেই প্রার্থী মানি না—মানবো না”, “দেশী না বিদেশি—দেশী দেশী”, “লালপুর না মাদারীপুর, লালপুর, লালপুর” ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এতে ওই সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর তারা অবরোধ তুলে নেয়।
বিক্ষোভে গোপালপুর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান, লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পারুল আক্তার, উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ইসমাইল হোসেনসহ উপজেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের শত শত নেতাকর্মী অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, “নাটোর-১ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে হলে তৃণমূলের নেতা ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজনকেই মনোনয়ন দিতে হবে।” তারা অভিযোগ করেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে বহিরাগত প্রার্থী ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দিয়েছে। বক্তাদের দাবি, রাজন দীর্ঘদিন ধরে দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং লালপুর-বাগাতিপাড়ায় তাঁর সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যন্ত দৃঢ়।
এ সময় বক্তারা আরও বলেন, মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ৩ নভেম্বর লালপুর উপজেলা ছাত্রদলের নেতা জিল্লুর রহমানের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে পুতুল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ইতোমধ্যে গৌরীপুর, কদিমচিলান, গোপালপুর ও আজিমনগর স্টেশনে রাজনপন্থীরা বিক্ষোভ ও সড়কপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন।
রাজনের অনুসারীরা দাবি করেন, ডা. রাজন শুধু দলেরই নয়, লালপুর–বাগাতিপাড়ার মানুষের ‘দুঃসময়ের কান্ডারী’। তাই তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হবেন।
এ প্রসঙ্গে ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন মুঠোফোনে বলেন,“জনমত উপেক্ষা করে কোনো মত চাপিয়ে দেওয়া হলে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমি আশা করব, দল সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। তৃণমূলের আশা–আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেবে। জনগণের চাওয়া ও দলের সিদ্ধান্ত যদি সাংঘর্ষিক হয় তাহলে দলের প্রতি জনগণেরও দায়বদ্ধতা কমে আসবে।  আমি লালপুরে জন্মেছি, লালপুরেই আমার সংসার। লালপুর–বাগাতিপাড়ার মানুষের সঙ্গে মিলে–মিশে থাকতে চাই।”
অন্যদিকে ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুল গণমাধ্যমকে বলেন,“আমাদের ভাই–বোনের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। একটি কুচক্রী মহল আমাদের সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। সাত দিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। জনপ্রিয়তা যাচাই করেই দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এলাকার মানুষ বিপুল ভোটে আমাকে বিজয়ী করবেন।”
এদিকে স্থানীয়দের অনেকে জানান, বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সময়মতো দলের ভেতরের এই বিরোধ মীমাংসা না হলে নির্বাচনী মাঠে বিএনপি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলেও তারা মনে করেন।
উল্লেখ্য, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নাটোরের চারটি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন পুতুলকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ঘোষিত ধানের শীষের প্রার্থী ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন পুতুলের বড় ভাই ডা. ইয়াসির আরশাদ রাজন। মনোনয়ন ঘোষণার পর ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় রাজনপন্থী ছাত্রদল কর্মী জিল্লুর রহমানের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে পুতুল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন সন্ধ্যাতে গৌরীপুর ও কদিমচিলান এলাকায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন তার সমর্থকরা। পরদিন গোপালপুর উপজেলা গেট ও সিএনজি স্ট্যান্ডে পুনরায় বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে তারা। এদিকে একই দাবিতে ৫ নভেম্বর আজিমনগর স্টেশন সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপুর অনুসারীরা।

সম্পাদনায় : রাশিদুল ইসলাম রাশেদ

সাব এডিটর, প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.