সোমবার | ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

খেজুর গুড়ের ভেজাল প্রতিরোধে গোলটেবিল বৈঠক

নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে শীতকালীন খেজুর গুড়ের ভেজাল প্রতিরোধে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর ২০২৫) ‘নিরাপদ খাদ্য আমাদের অধিকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সিসিডিবি-সিপিআরপি ঈশ্বরদীর সহযোগিতায় উপজেলার লালপুর সদরে ফুড প্যালেস নামের একটি রেস্টুরেন্টে এই বৈঠক হয়।
সিসিডিবি লালপুর উপজেলা নেটওয়ার্কের সভাপতি পারুল আকতারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মোখলেছুর রহমান। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় কৃষি আনান্দেলনের প্রতিষ্ঠাতা আইনজীবি শফিকুর রহমান, নিরাপদ খাদ্য উদ্যোক্তা ও প্রাকৃত কৃষিজ নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ব্রাত্য আমিন, বাংলাদেশ কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নাটোর জেলা শাখার সভাপতি শামীমা লাইজু নীলা, রঘুনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, সিসিডিবি ঈশ্বরদী এরিয়া অফিসের ম্যানেজার কাওছার আল মামুন, কো-অর্ডিনেটর (জেন্ডার এন্ড এ্যাডভোকেসি) মারজিয়া প্রভা, কো-অর্ডিনেটর (সিপিআরপি) ডেনিস মাকান্দী, সমাজ সংগঠক ইকবাল হোসেন, চৌমুহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক ইমাম হাসান মুক্তি, মোজাম্মেল হক, শাহ্ আলম সেলিম প্রমুখ।
এতে সিসিডিবি লালপুর উপজেলা নেটওয়ার্কের ২৬টি সংগঠনের প্রতিনিধি, সচেতন সমাজ, গুড় উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রতিবছর নাটোর জেলায় প্রায় ৯ হাজার ৬২৩ টন গুড় উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৭৯ টন গুড় আসে লালপুরের খেজুর গাছ থেকে। নাটোরে উৎপাদিত এই গুড়ের আর্থিক মূল্য অন্তত ১০৫ কোটি টাকা। আর এই লালপুরেই গড়ে উঠেছে শতাধিক ভেজাল গুড়ের কারখানা। এসব কারখানায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক হাইড্রোজ, ফিটকারি ও রং ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিক মুনাফার আশায় পণ্যকে আকর্ষণীয় হিসেবে উপস্থাপন করতে কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করছেন। অনেক সময় খেজুর রস ছাড়াই কেবল চিনি, ময়দা ও রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই গুড়। এই চিনিগুলো ইন্ডিয়া থেকে এলসি করা গোখাদ্য হিসেবে আমদানি করা হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, খেজুর রসের চেয়ে এই চিনি দিয়ে গুড় তৈরি করলে গুড় প্রতি প্রায় ৫০ টাকার বেশি লাভ হয়। লালপুরে প্রায় ৩০টি গ্রাম এই ভেজাল গুড় নির্মাণের সাথে যুক্ত। চিনি দিলে গুড় শক্ত হয় এবং সহজে ভাঙ্গে না। অপরদিকে খাঁটি খেজুর রসের গুড় মোলায়েম ও ভঙ্গুর হয়। এছাড়াও গুড়ের রঙ আকর্ষণীয় করতে কমলা, লাল রঙ, চুন, ফিটকিরি, গোখাদ্য সুগার মিলের লালি ও ভারতীয় মেয়াদোত্তীর্ণ চিনির পচা সিরা ও ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। এর ফলে খাঁটি গুড়ের চেয়ে ভেজাল গুড় মানুষ খায় বেশি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ভেজাল গুড় খেলে লিভার, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থেকে শুরু করে এমনকি ক্যান্সারের মতো গুরুতর অসুখও হতে পারে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ একটি মানবাধিকার। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন প্রতিরোধে প্রণীত হয়েছে, যা খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক বা ভেজাল মেশানোকে কঠোরভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। এই আইনের অধীনে ভেজাল খাদ্যের সংজ্ঞা, উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিপণনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এর মধ্যে, খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এই আইন তৈরি করা হয়েছে মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৪২ ধারা অনুযায়ী, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ একটি অপরাধ। এই অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। এই আইনের আওতায় ভোক্তাগণ সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.