
প্রাপ্তি প্রসঙ্গ ডেস্ক:
গ্রামের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানা। সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ড্রোন হামলায় নিহত বীর সেনানীর বাড়ি নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামে। তাঁকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে সকাল থেকেই ভীড় জমান স্বজন ও এলাকাবাসী।
রোববার (২১ ডিসেম্বর ২০২৫) বৈরি আবহাওয়ার কারনে বেলা ২টা ৪৭ মিনিটে মাসুদ রানার মরদেহ বহনকারী সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার উপজেলার করিমপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করার পর লাশ রেখে চলে যায়। সেখান থেকে সেনাবাহিনীর লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স ৩টা ১২ মিনিটে বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। পরে বোয়ালিয়াপাড়া হাইস্কুল মাঠে ৩টা ৫৪ মিনিটে জানাজা নামাজ শেষে যথাযথ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ও শহীদ পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২১ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা সেনানিবাস কেন্দ্রীয় মসজিদে শহীদদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর হেলিকপ্টারযোগে শহীদ মাসুদ রানার মরদেহ আনা হবে তার নিজ গ্রামে। সেখানে পৌঁছানোর পর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় স্থানীয় কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর আগে মরদেহ বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য করিমপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠটি সেনাবাহিনীর একটি দল অস্থায়ী হেলিপ্যাড নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
এ দিকে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে মাসুদ রানাসহ শহীদ ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহীদ মাসুদের গ্রামের বাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেন এলাকার লোকজন।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূমিহীন কৃষক সাহার উদ্দিন ও মর্জিনা খাতুন দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিলেন মাসুদ রানা। চরম অভাব-অনটনের মধ্যে পড়াশোনা করে ২০০৬ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। বাবার কষ্ট লাঘব করতে সংসারের হাল ধরেন। ছোট দুই ভাই-মনিরুল ইসলাম জনি ও রনি আহমেদকে পড়াশোনা করান। বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় পরবর্তীতে তারাও সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্ত্রীকে বিয়ের পর পড়াশোনায় উৎসাহ দিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করান। বর্তমানে স্ত্রী স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। মাসুদের স্বপ্ন ছিল-স্ত্রীকে একজন শিক্ষিত মা হিসেবে গড়ে তোলা। একমাত্র মেয়ে মাগফিরাতুল মাওয়াকে বানাতে চেয়েছিলেন দেশ সেরা চিকিৎসক। গত বছর ভর্তি করিয়েছিলেন যশোর ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে। দূর প্রবাসে থেকেও পরিবারকে ভোলেননি তিনি। গত ২৮ নভেম্বর মেয়ের জন্মদিনে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্টে বাবার স্বপ্নের কথা লিখেছিলেন মাসুদ।
স্বজনরা জানান, গত ৭ নভেম্বর স্ত্রী ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদান যান মাসুদ রানা। মিশন শুরুর মাত্র ১ মাস ৭ দিনের মাথায় গত ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় ড্রোন হামলায় তিনিসহ ৬ সেনাসদস্য শহীদ হন। শান্তিরক্ষী হিসেবে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়লেও, কফিনে মুড়িয়ে ফিরেছেন এই বীর।
নাটোর স্টেডিয়ামের আর্মি সেনাক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। আমরা শোকাহত এবং শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
সম্পাদনা/ রাশিদুল ইসলাম রাশেদ /উপসম্পাদক/ প্রাপ্তি প্রসঙ্গ/২১-০২