
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নাটোরের লালপুর উপজেলার তিলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে।
‘স্মৃতির টানে প্রিয় প্রাঙ্গণে, এসো মিলি প্রাণের বন্ধনে’-এই স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর ২০২৫) দিনব্যাপী বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য শতবর্ষ উৎসব।
উপলক্ষে বিদ্যালয়ের শত বছরের গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় র্যালি, কুইজ প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচি।
সকাল ৭টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং প্রয়াত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম পর্বে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি ও শোভাযাত্রা, পরিচয় পর্ব, স্মৃতিচারণ এবং বর্তমানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেলে শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষা একটি জাতির আত্মপরিচয়ের মূল স্তম্ভ। সেই ভিত্তিকে সুদৃঢ় করতে তিলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শত বছর ধরে নিরলসভাবে আলোর পথ দেখিয়ে চলেছে। তিনি শতবর্ষ আয়োজনে অংশগ্রহণকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সম্পাদক মো. শাহজাহান আলীর সঞ্চালনায় এবং আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ বলেন, ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিদ্যালয়টি এ অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
১৯৬৫ সালে এই বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে পাস করা শিক্ষার্থী মো. নুরুল ইসলাম আবেগঘন অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান আমার সেই শিশু কালকে ফিরে দিয়েছে। আমার সাথীদের অধিকাংশ আজ আর নেই। আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
বিদ্যালয়ের ১৯৭৮ সালে প্রথম বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী অঞ্জন কুমার কুন্ডু অনুষ্ঠানে সম্মাননা পাওয়ায় আনন্দে উৎফুল্লতা প্রকাশ করে বলেন, ‘শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
২০১৭ সালে বৃত্তিপ্রাপ্ত তাসফিয়া তাবাসসুম রিংকি বলেন, ‘নবীন ও প্রবীণ কৃতীদের এই মিলন মেলা আমাকে চরমভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।’
অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন, ভেড়ামারা পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (অব.) আবু বকর সিদ্দিক, রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক কামরুজ্জামান গোপন, আমেরিকা প্রবাসী মো. আশরাফুল ইসলাম, ভেড়ামারা নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী মো. রবিউল আওয়াল, গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মোছা. আতিকা বানু, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিজু আহমেদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজন।
বক্তারা তিলকপুর গ্রামের কৃতী সন্তানদের শিক্ষা, প্রশাসন, চিকিৎসা, প্রকৌশল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের কথা নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, তিলকপুর গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি পূর্বে ‘চামটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে পরিচিত ছিল। স্থানীয় জনগণের আবেগ ও পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০২১ সালে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘তিলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরণ করা হয়।