সোমবার | ৪ আগস্ট, ২০২৫ | ২০ শ্রাবণ, ১৪৩২

লালপুরকে ‘সেবাধর্মী থানা’ হিসেবে কার্যক্রম উদ্বোধন

নাটোর প্রতিনিধি:
প্রতিষ্ঠার ১৯৮ বছর পর সেবার মান বৃদ্ধিতে নাটোরের লালপুরকে ‘সেবাধর্মী থানা’ হিসেবে ঘোষনা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসন। প্রথম ১৮২৭ সালে প্রথম লালপুরে একটি পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়।
শুক্রবার (১ আগস্ট ২০২৫) এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন, প্রধান অতিথি রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান, পিপিএম (বার), পিএইচডি।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন (পিপিএম) এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. সারোয়ার জাহান।


নাটোর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইফতে খায়ের আলমের পরিচালনায় অন্যান্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. একরামুল হক (পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদা শারমিন নেলী, সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) সনজয় কুমার সরকার, শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মো. রুহুল আমিন লাবু, নাটোর সদর কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. মোস্তফা কামাল, ইন্সপেক্টর অপরাধ শাখা নীরেন্দ্রনাথ মন্ডল, বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম সারওয়ার, গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. আসমাউল হক, নলডাঙ্গা থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম, লালপুর থানার ওসি মো. মমিনুজ্জামান, সিংড়া থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর (শহর ও যানবাহন) মো. রেজাউল করিম, ইন্সপেক্টর (ডিএসবি) মো. মশিউর রহমান, ইন্সপেক্টর (পুলিশ কন্ট্রোল) মো. আবু সাইদুর রহমানসহ অন্যান্য অফিসার, সকল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।


নাটোরের লালপুর থানার সেবাধর্মী থানা হিসেবে কার্যক্রম উদ্বোধনকালে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে বক্তব্যে ডিআইজি মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন থানার সেবা কার্যক্রমে পুলিশ সদস্যদের জনবান্ধব সেবা প্রদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি লালপুরের সাধারণ মানুষসহ তৃণমূল পর্যায় থেকে থানায় এসে তার কাঙ্খিত সেবা পেতে নতুন উদ্যমে শুরু হওয়া সেবাধর্মী থানায় কর্মরতরা ভূমিকা রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান আরও বলেন, পুলিশের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে চাই। মানুষের নিরাপত্তা, মানবাধিকার, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের প্রতি সচেতনতা বোধ ও সহজে আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। সে লক্ষ্যে রাজশাহী রেঞ্জের আটটি জেলায় আটটি থানাকে সেবাধর্মী থানায় রুপান্তর করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে লালপুর থানায় অভ্যর্থনা ও তথ্য সেবা ডেস্ক, প্রথম সাড়া দানকারী কর্মকর্তা ডেস্ক, অনলাইন জিডি সংক্রান্ত সেবা ডেস্ক, দেওয়ানি ও সম্পত্তি হেল্প ডেস্ক, নারী ও শিশু সেবা কক্ষ ও সহায়তা ডেস্ক এবং আইনি পরামর্শ সহায়তা ডেস্ক যুক্ত করা হয়েছে। এতে থানার সেবা কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।


পরবর্তীতে থানার কর্মরত সকল পদমর্যাদার সদস্যদের সাথে ব্রিফিং সভায় ডিআইজি বলেন, সেবাধর্মী থানা হিসেবে লালপুর থানার যাত্রাকে প্রতিটি পুলিশ সদস্য যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। তিনি যথাযথ সেবা প্রদানে দায়িত্বরত সদস্যরা সেবা প্রত্যাশী মানুষকে দ্রুত প্রতিকার প্রদানের মাধ্যমে আস্থা অর্জনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেবাধর্মী থানা হিসেবে আমাদের এই প্রচেষ্টা সফল হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. সারোয়ার জাহান বলেন, একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে নিজেকে সাধারণ মানুষের কাতারে চিন্তা করে থানা থেকে যে সেবা প্রত্যাশা করেন আপনি লালপুর থানার কর্মরত পুলিশ সদস্য হিসেবে সেই সেবা জনগণকে দিতে পারলে সেবাধর্মী থানার উদ্যোগ সফল হবে।


সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা যার যার পদমর্যাদা অনুযায়ী নিজ নিজ ক্ষেত্রে অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে সেবাধর্মী থানা হিসেবে লালপুরসহ জেলার সকল থানাকে সেবাধর্মী থানায় পরিণত করা সম্ভব। তিনি পুলিশ সদস্যদের নিজ অফিসে আগত পুলিশ সদস্যদের সেবা ও জনসাধারণের কাঙ্খিত সেবা প্রদানের মাধ্যমে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
এর আগে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি লালপুর থানায় পৌঁছালে জেলা পুলিশের একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল গার্ড অব অনার প্রদান করেন। জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ প্রধান অতিথিকে ফুলেল অভিবাদন জানান। তিনি প্যারেডের সালামি গ্রহণসহ প্যারেড পরিদর্শন করেন।
লালপুর থানার নথি ও বিভিন্ন ইতিহাস পর্যালোচনা জানা যায়, পদ্মা নদী ও চলনবিল অঞ্চলে ঠগী বা গামছা মোড়া জলদস্যুদের অত্যাচার ছিল (পাবনা জেলার ইতিহাস, ১১০-১১৪ পৃ.)। ফলে ১৮২৭ খৃ. সালে লালপুর একটি পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হয়। বৃটিশ শাসক স্যার লর্ড লরেন্সের শাসনামলে ভারত সরকারের পক্ষে পুলিশ ১৮৬৯ সালে ২.১৩ একর জমি লালপুর থানা নির্মানের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। ১৮৯৯ সালে মাত্র এক হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয় কক্ষের ছাদের ঘরে লালপুর থানার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। ১৯১৫ সালে দুই হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯ একটি চারচালা টিনের ঘর ব্যরাক নির্মান করা হয়। ১৯৩১ সালে একহাজার ৫৯৮ টাকায় থানা ভবন সংস্কার করা হয়। ১৯৩৩ সালে মাত্র ৩৯৪ টাকায় একটি রান্না ঘর নির্মান করা হয়। পরবর্তীতে কয়েকটি সীমানা প্রাচীর, আবাসিক ভবন ও থানার মূল ভবন নির্মানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯০১ সালে থানার আয়তন ১১৪ বর্গমাইল। ১৯৩১ সালের ছিল আয়তন ৯০ বর্গমাইল। মোট চৌকিদার ৭৯ জন ও মোট দফাদার ৯ জন। (নাটোরের কথা ও কাহিনী, নাটোর মহকুমা সম্মিলনী, পৃষ্ঠা-৩২)।
বাংলা ১২৭০ সালের ১ ফাল্গুন রাজা পরেশ নারায়ণ রায়ের সম্মিতক্রমে শ্রী গণেষ সুধারামের লিখিত পাট্টা অনুসারে ‘জমির নির্ধারণী পাট্টা’ অনুযায়ী দেখা যায়, সে সময় বিলমাড়িয়া থানা ছিল। বাংলা ১২৯৬ সালের রেকর্ডে লালপুর থানা হিসেবে দেখা যায়। প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে ১৯৮৩ সালে লালপুর থানা উপজেলায় উন্নীত হলে আয়তন হয় ৩২৭.৯২ বর্গকিলোমিটার।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.