নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুরে হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ সদস্যের একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী। বুধবার (৮ অক্টোবর) গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার বিলমাড়িয়া ও দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
থানা সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের একটি যৌথ দল বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নাগশোষা ও মোহরকয়া এবং দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের নওপাড়া ও পানসিপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় হ্যাকিংয়ে জড়িত সন্দেহে পানসিপাড়া গ্রামের আলতাফ মালিথার ছেলে নাজমুল মালিথা (২৪), শাহজাহান মালিথার ছেলে ওবায়দুল মালিথা (২৪), ফজলুর রহমানের ছেলে রাসেল আহমেদ (২০), নওপাড়া গ্রামের মুসাব্বর হোসেনের ছেলে আরিফুল ইসলাম (৩২), মোহরকয়া গ্রামের আজগর মণ্ডলের ছেলে এখলাস মণ্ডল (২৩), তসলিম আলীর ছেলে রাজু আহমেদ (২২), নাগশোষা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মারুফ হোসেন (২৩) ও শরিফুল ইসলামের ছেলে মোহন আহমেদ (১৭)–কে আটক করা হয়।
অভিযান চলাকালে তাদের কাছ থেকে ৩৫টি মোবাইল ফোন ও অতিরিক্ত ৫টি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হ্যাকিং চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহে আটক মোহরকয়া গ্রামের জামরুল থান্ডারের ছেলে আহমেদ আলী সাব্বির (১৭), পানসিপাড়া গ্রামের নাজির প্রামাণিকের ছেলে টুটুল আলী (১৬) ও নওপাড়া গ্রামের বাবলু সরকারের ছেলে সোহাগ আলী (২৮)–কে যাচাই–বাছাই শেষে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তবে আটক ব্যক্তিদের অভিভাবকদের অভিযোগ, যাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তারাও চক্রটির সদস্য। তাদের দাবি, একই অপরাধে সবার বিরুদ্ধে সমান ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।
এ বিষয়ে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “হ্যাকিং চক্রগুলো ব্যাংক রিসিটসহ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ও মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণা চালিয়ে প্রবাসী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেক সময় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের টার্গেটে পড়ছেন।”
তিনি আরও জানান, “অভিযানে ১২ জনকে আটক করা হয়। যাচাই–বাছাই শেষে ৯ জনকে সাইবার সুরক্ষা আইনে আদালতের মাধ্যমে নাটোর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৩ জনকে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।” ওসি প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের থানায় অভিযোগ জানাতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সাল থেকে উপজেলায় ইমু হ্যাকিং শুরু হয়। ২০২০ সালের দিকে লালপুর উপজেলা ইমু হ্যাকিংয়ের স্বর্গরাজ্য ও বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন হ্যাকিংয়ের সদর দপ্তর খ্যাতি পায়। সে সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় হ্যাকিং কার্যক্রম কিছুটা হ্রাস পেলেও পরে নজরদারি ও অভিযানের অভাবে দ্রুত বিস্তার লাভ করে। তবে ২০২৩ সালের পর চলতি বছর আবারও লালপুরে হ্যাকিং চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এর আগে গত ২৪ মে মোহরকয়া গ্রাম থেকে চক্রের ৩ সদস্য, ২৭ মে মোহরকয়া ও পানসিপাড়া থেকে ৫ সদস্য এবং ৯ জুলাই বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরও ৮ সদস্যকে আটক করেছিল যৌথবাহিনী। তবে জামিনে মুক্ত হয়ে তারা আবারও একই অপরাধে যুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, চক্রের মূল হোতারা ধরা না পড়ায় লালপুরে বারবার এই অপরাধ মাথাচাড়া দিচ্ছে। তারা হ্যাকিং চক্রের রাঘববোয়ালদের শনাক্ত করে স্থায়ীভাবে নির্মূলের দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদনায়: রাশিদুল ইসলাম রাশেদ
সাব এডিটর, দৈনিক প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ