রবিবার | ৯ নভেম্বর, ২০২৫ | ২৪ কার্তিক, ১৪৩২

নাটোরে ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’: আটক ২০, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

নাটোর প্রতিনিধি :

নাটোরের লালপুরে পদ্মা নদীর চরাঞ্চল ও সংলগ্ন স্থলভাগে সন্ত্রাস দমন ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা পুলিশের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’। শনিবার (৮ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত টানা ১৬ ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযানে দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং ২০ জনকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম।

রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ড. মোহাম্মদ শাহজাহান পিপিএম (বার)-এর নির্দেশনায় এবং নাটোর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এতে জেলা পুলিশ, ডিবি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, র‍্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের প্রায় ৪০০ সদস্য অংশ নেন।

অভিযান চলাকালে চর জাজিরা, চর লালপুর ও চর দিয়ার বাহাদুরপুরসহ পদ্মা নদীর বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১৪টি নৌকা ও ট্রলারে নদীপথে এবং ১০টি টিম স্থলপথে সাঁড়াশি তল্লাশি চালায়। এতে দুইজন হ্যাকার, ছয়জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, একজন হত্যা মামলার আসামি এবং দুইজন মাদক ব্যবসায়ীসহ মোট ২০ জনকে আটক করা হয়।

তল্লাশি শেষে উদ্ধার করা হয় দেশীয় তৈরি একটি ওয়ানশুটার গান, একটি রিভলভার, ছয়টি বড় ছুরি, ২২টি হাসুয়া, চারটি চাকু, দুটি চাপাতি, একটি ছোরা, একটি দা, একটি লোহার পাইপ, একটি টিউবওয়েল ও একটি কাঠের চৌকি।

অভিযান শেষে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, “পদ্মা নদীর চরাঞ্চল ও আশপাশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। অপরাধ দমনে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।”

এর আগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) একই এলাকায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে বিশেষ টহল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। তখন অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য চর জাজিরা, চর লালপুর ও চর বাহাদুরপুর এলাকায় নদীপথে টহল দেন।

পটভূমি

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে ‘কাকন বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী চক্রের তৎপরতা বেড়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা প্রায়ই গুলি চালানো, অপহরণ, সশস্ত্র হামলা, বালুমহাল দখল, মাছ ধরার ঘাট ও কৃষিকাজে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিল।

গত ২৭ অক্টোবর দৌলতপুর, বাঘা ও লালপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী মরিচা ইউনিয়নের নতুন চর এলাকায় খড় কাটতে গেলে কৃষকদের ওপর কাকন বাহিনীর গুলিতে আমান মণ্ডল ও নাজমুল মণ্ডল নিহত হন এবং দুজন আহত হন। পরদিন ভেড়ামারার চরে লিটন নামে আরও এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়, যাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

এর আগে ৫ জুন ঈশ্বরদীর সাড়া ঘাটে প্রকাশ্যে অস্ত্র মহড়া ও বালুমহাল দখল, ৯ জুন চার যুবলীগ কর্মীকে অপহরণ ও কুপিয়ে জখম, ১২ জুলাই যুবদল নেতা টনি বিশ্বাসের বালুঘাটে হামলা এবং ৬ অক্টোবর একই এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় দুইজন আহত হন। এসব ঘটনায় কাকন বাহিনীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে আসে।

চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পুলিশের সাম্প্রতিক ‘অপারেশন ফার্স্ট লাইট’ অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা—এই ধরনের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকলে পদ্মার চরে আবারও শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে।

 

সম্পাদনায় : রাশিদুল ইসলাম রাশেদ

সাব এডিটর, প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.