
নিজস্ব প্রতিবেদক :
পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি সরকারি বাসভবনের কাছাকাছি পুকুরে বস্তাবন্দি করে আটটি কুকুরছানা হত্যার ঘটনায় এক কর্মকর্তাকে সরকারি কোয়ার্টার ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন৷ মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর, ২০২৫) রাতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ওই ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুন নূর মামলার বিষয়টি ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে অভিযুক্ত কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনের আঙিনায় একটি কুকুর আটটি ছানা জন্ম দেয়। রবিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যার পরে ছানাগুলো নিখোঁজ হয় এবং সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে ওই পুকুর থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় আটটি কুকুরছানার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকালে মা কুকুরটি ঘটনাস্থল ঘুরে আর্তনাদ করছিল; পরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মীরা তাকে চিকিৎসা দিয়ে সেডেটিভ ইনজেকশন প্রয়োগ করেন বলে জানা যায়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে জানানো হয়, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলা কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে কর্মরত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়ন ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “ছানাগুলোকে এভাবে হত্যা করা চরম অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজ। শাস্তিস্বরূপ অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে এক দিনের মধ্যে সরকারি কোয়ার্টার ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন জানান, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে প্রাণী কল্যাণ আইন’২০১৯ এর ৭ ধারায় মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় ক্ষুদ্র কৃষক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা হাসানুর রহমান নয়নের স্ত্রী নিশি বেগমকে আসামি করা হয়েছে।
আকলিমা খাতুন বলেন, “ঘটনাটি জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয়েছে। যে কারনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার মহোদয় ফোন করে এই ঘটনাকে অমানবিক বলে জানিয়েছেন। উপদেষ্টা আরও বলেন, এই ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই প্রাণী হত্যায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়াও মহাপরিচালক স্যারও ফোন করে তার পক্ষে মামলা দায়ের করার নির্দেশনা দিয়েছেন।”
এদিকে এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা থেকে এনিমেল অ্যাকটিভিস্ট কমিটির একটি তদন্ত টিম ঈশ্বরদীতে এসেছেন।
অভিযুক্ত কর্মকর্তা হাসানুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমার স্ত্রী ছানাগুলোকে সরিয়েছিল। কিন্তু এগুলো যে মারা যাবে তা ভাবিনি। আমি এই ঘটনায় লজ্জিত ও দুঃখিত।” অন্যদিকে অভিযুক্ত কর্মকর্তা নয়নের স্ত্রী নিশি আক্তার বলেন, “বাচ্চাগুলো আমাদের বাসার সিঁড়ির কাছে থাকতো এবং খুব ডিস্টার্ব করত। তাই আমি বাজারের ব্যাগে ভরে পুকুরের পাশে রেখে আসি। কীভাবে পুকুরে পড়েছে জানি না। আমি নিজে ছানাগুলোকে পুকুরে ফেলিনি।”
ঈশ্বরদীর সাবেক ইউএনও সুবীর কুমার দাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি নিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তার সাবেক এই কর্মস্থলের পোষা কুকুরটি তিনি জন্ম থেকে লালন-পালন করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন লালটু। বদলির পর সেখানে কুকুরছানাদের ওপর “অন্ধকার নেমে এসেছে”। এই ঘটনায় তিনি চরমভাবে ব্যথিত। এমন অমানবিক হত্যার বিচার চেয়েছেন তিনি।
প্রকৃতি ও বন্য প্রাণীবিষয়ক স্থানীয় সংগঠন ‘নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনসার্ভেশন কমিউনিটি’-র সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাস বলেন, “জীবজন্তুদের রক্ষায় দেশে আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না হলে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা বন্ধ হবে না। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।”
সম্পাদনা: রাশিদুল ইসলাম রাসেদ/ উপসম্পাদক/ প্রাপ্তি প্রসঙ্গ/০৩-০১