
আমায় ছিঁড়ে খাও হে শকুন
শরীফ ওসমান হাদি
আমায় ছিঁড়ে খাও হে শকুন
হে সীমান্তের শকুন
এক্ষুনি ছিঁড়ে খাও আমাকে
হে আটলান্টিকের ঈগল
শিগগির খুবলে খাও আমাকে
হে বৈকাল হ্রদের বাজ
আঁচড়ে কামড়ে ছিন্নভিন্ন করো আমাকে।
আমার রক্তরসে শুধু অসহায়ত্ব আর অভাব;
কাগজের কামলারা তারে আদর করে মুদ্রাস্ফীতি ডাকে।
ঋণের চাপে নীল হয়ে যাচ্ছে আমার অণুচক্রিকা
সংসার চালাতে অন্তরে হয় ইন্টারনাল ব্লিডিং
কী আশ্চর্য, তবুও আমি মরছি না!
ওদিকে দোজখের ভয়ে
আত্মহত্যা করবারও সাহস পাই না আমি!
খোদাকে বললাম, আমি মরতে চাই
তিনি বললেন, বেঁচে আছ কে বলল?
সহস্রাব্দ উন্নয়নের সাক্ষী হিসেবে
রাজা তোমাকে মমি করে রেখেছেন!
বাজারে দীর্ঘশ্বাস ফেললে নাকি
রাজ্যের ভীষণ বদনাম হয়
রাজারও মন খারাপ হয় খুব।
কোতোয়ালরা ফরমান জারি করেছে
আমাকে সারাক্ষণই হাসতে হবে!
নইলে দেশি কুকুর ও বিদেশি মাগুরকে
একবেলা ভালোমন্দ খাওয়ানো হবে আমার মাংস দিয়ে
নিত্যদিন ব্রয়লারের ভুঁড়ি নাকি ওদের ভাল্লাগে না!
অথবা আমাকে ভাগ দিয়ে বেচা হবে
মানুষেরও তো মানুষ খাওয়ার সাধ হতে পারে, তাই না?
ভাগ্যিস তা বিদেশি সুপারশপে বিকি হবে না
দেশি মানুষেরই তো হক বেশি আমাকে খাওয়ার!
এ দোজখই যখন নিয়তি
তখন আমি উদাম হয়ে ডাকছি
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মাংসাশী বিহগদের
হে ঈগল, চিল ও ভয়ংকর বাজেরা
হে সাম্রাজ্যবাদী সাহসী শকুনিরা
তোমরা এফ-থার্টি ফাইভের মতো
মিগ টুয়েন্টি নাইনের মতো—
দল বেঁধে হামলে পড়ো আমার বুকে
আমার রান, থান, চক্ষু, কলিজা
আজ সব তোমাদের গনিমতের মাল
দেশি শুয়োর খুবলে খাওয়ার আগেই
আমায় ইচ্ছেমতো ছিঁড়ে খাও তোমরা!
দোহাই, শুধু মস্তিষ্কটা খেয়ো না আমার
তা হলে শীঘ্রই দাস হয়ে যাবে তোমরাও।
[সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি: শরিফ ওসমান গণি বিন হাদি বা ওসমান হাদি (৩০ জুন ১৯৯৩ – ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫) ছিলেন একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। হাদি জুলাই শহিদদের অধিকার রক্ষা ও আওয়ামী লীগ নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী সক্রিয় রাজনীতির জন্য আলোচনায় আসেন।
ওসমান হাদি ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শরীফ হাদি, যিনি একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্থানীয় ইমাম ছিলেন। ৬ ভাইবোনের মধ্যে হাদি সর্বকনিষ্ঠ। নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে হাদি তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে চতুর্থ শ্রেণিতে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি আলিম পরীক্ষা সম্পন্ন করে পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
হাদি ইংরেজি শেখার একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছিলেন এবং সর্বশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করছিলেন।
২০২৫ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি জুমার নামাজের পর ঢাকার বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখ লাখ মানুষ তার জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের পাশে সমাহিত করা হয়।]