লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
একুশে পদক-২০২৩ পাচ্ছেন নাটোরের লালপুরের কৃতী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন।
রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ (মরণোত্তর) পদক ঘোষনা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। উপসচিব বাবুল মিয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও দুইটি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদানের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিনের সন্তান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সাগর আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, এ স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। তাঁর মা সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য শেফালী মমতাজের সাথে তিনি পদক গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নাটোরের লালপুর উপজেলার আব্দুলপুর মিল্কিপাড়া গ্রামে ১৯৪৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন জনপ্রিয় নেতা মমতাজ উদ্দিন। পিতা বিয়াকুল প্রামানিক ও মাতা আবেজান বেওয়া। স্ত্রী শেফালী মমতাজ (২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত সাবেক নারী সংসদ সদস্য মনোনীত হন)। তাঁদের সন্তান শামীম আহমেদ সাগর, ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফারহানা ববি নিভা, সহকারী রেজিস্ট্রার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ (মরণোত্তর) একুশে পদক-২০২৩-এ ভূষিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ উদ্দিন।
তিনি করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অস্টম শ্রেণি, চকনাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি, নাটোর নবাব সিরাজ উদ দৌলা কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি এবং ঈশ্বরদী জিন্নাহ কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতক পাশ করেন।
তিনি লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (মুজিব বাহিনী)-এর কমান্ডার ছিলেন।
১৯৭৭-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি সালামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পরাজিত হন। নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনে ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ (১৯৮৬-১৯৮৮) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মমতাজ উদ্দিন (লালপুর) রিকসা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১ বছর ১০ মাস। তিনি ১৯৯০ সালে লালপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
তিনি ১৯৮৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সম্মেলনে লালপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নাটোর জেলা শাখা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ফজলুর রহমান পটলের নিকট পরাজিত হন।
২০০৩ সালের ৬ জুন মমতাজ উদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। ওই দিন রাত ১০টার সময় নাটোরের গোপালপুর-আব্দুলপুর সড়কের দাঁইড়পাড়া নামক স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভাষা আন্দোলনে খালেদা মনযুর-ই-খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শামসুল হক (মরণোত্তর) ও হাজী মো. মজিবর রহমান; অভিনয়ে মাসুদ আলী খান ও শিমূল ইউসুফ; সঙ্গীতে মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আব্দুল হাকিম ও ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর); শিল্পকলায় নওয়াজীশ আলী খান; আবৃত্তিতে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়; চিত্রকলায় কনক চাঁপা চাকমা; মুক্তিযুদ্ধে মমতাজ উদ্দীন (মরণোত্তর); সাংবাদিকতায় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর); গবেষণায় ড. মো. আবদুল মজিদ; শিক্ষায় অধ্যাপক ড. মযহারুল ইসলাম (মরণোত্তর) ও বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর; সমাজসেবায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ও মো. সাইদুল হক; রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম (মরণোত্তর) ও আকতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) এবং ভাষা ও সাহিত্যে ড. মনিরুজ্জামানকে একুশে পদকের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে সরকার।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু করা একুশে পদক বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, সমাজসেবক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হয়ে থাকে। পদকপ্রাপ্তদের এককালীন নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।