সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ, গুরুদাসপুর (নাটোর) :
দিগন্ত জুড়ে সরিষা খেত। সরিষা জমির পাশে মৌয়ালরা বসিয়েছেন সারি সারি মৌবাক্স। আর মৌয়ালরা সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নাটোরের গুরুদাসপুরে এ দৃশ্য এখন চোখে পড়ার মতো।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে মতে, চলতি মৌসুমে গুরুদাসপুরে ১ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৩৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে চলনবিল অংশে চাষ হয়েছে ৭৫০ হেক্টর জমিতে। ৩৫০ হেক্টর সরিষা জমির পাশে মৌয়ালরা ৬৮০টি মৌবাক্স বসিয়েছেন। সেখান থেকে ৬ হাজার ৩৭৫ টন মধু সংগৃহীত হবে। প্রতিকেজি মধুর দাম ৩৫০ টাকা ধরা হয়েছে। চলতি রবি মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে ২০০ কোটি টাকার উপরে মধু সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি ২০২৪) সরেজমিনে গুরুদাসপুরের চলনবিলে রুহাই মাঠে দেখা গেছে, সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। খেতের পাশে শত শত মৌবাক্স পেতেছেন মৌচাষিরা। মৌমাছির দল এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে গিয়ে জমা করছে। নির্দিষ্ট সময়ে মৌয়ালরা বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করে তা বাজারজাত করছেন।
মৌয়ালরা জানান, মধু সংগ্রহের জন্য কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় বক্স। রোদ কিংবা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বাক্সের ওপরের অংশ কালো রঙের পলিথিন ও পাটের তৈরি চট দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে হয়। বাক্সে মৌমাছির অবাধ চলাচলের ছিদ্র পথ দিয়ে মাছিগুলো বাক্সের ভেতরে প্রবেশ করে। বাক্সে বিশেষ কৌশলে রানি মৌমাছিকে আটকে রাখা হলে শ্রমিক মাছিগুলো রানিকে অনুসরণ করে বক্সে সমবেত হয়। প্রতিটি মৌবক্সে সাত থেকে ১০টি কাঠের ফ্রেমের সঙ্গে মাছি মধু সঞ্চয় করে। পরে মৌবাক্স বের করে মেশিনের মাধ্যমে বিশেষ কৌশলে ঘুরিয়ে সংগৃহীত মধু বাজারে বিক্রির উপযোগী হয়ে থাকে।
নাজিরপুর ইউনিয়নের মৌচাষি দিগন্ত মন্ডল (২০) জানান, তার ১০০টি মৌবাক্স থেকে সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৩২০ কেজি মধু উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি কেজি মধুর বর্তমান বাজার দর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা হিসাবে তিনি দৈনিক ১৫ হাজার টাকা আয় করছেন। হিসাব মতে ছয় মাসে (১৮০ দিনে) ১০০ বাক্স থেকে তিনি ২৭ লাখ টাকা আয় করছেন।
দিগন্ত মন্ডল আরো জানান, বছরের অবশিষ্ট ৬ মাস মৌমাছিগুলোকে চিনি মিশ্রিত তরল খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। সেক্ষত্রে চিনি, শ্রমিকের মজুরি, মৌবাক্স খরচ মিলিয়ে বছরে ব্যয় ১২ লাখ টাকা। খরচ বাদে বছরে এখান থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় করেন তিনি। চলনবিলে উৎপাদিত মধুর স্থানীয় বাজার, দেশীয় কোম্পানি ও অনলাইন বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
নাটোর জেলা মৌচাষি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলিপ মন্ডল বলেন, তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিসিক থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে মৌচাষ শুরু করেছেন। লাভজনক পেশা হওয়ার কারণে তাকে অনুসরণ করে তার এলাকার ৪০টি মৌ খামার গড়ে উঠেছে। এতে অনেকেই বেকারত্ব ঘুচিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, সরিষা আবাদ মধু সংগ্রহ দুটোই বেড়েছে। জমির পাশে মৌবাক্স স্থাপনের ফলে সরিষার ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে যায়।