শনিবার | ২৭ জুলাই, ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১

অবহেলায় লালপুরের শহীদ মমতাজ উদ্দিন স্টেডিয়াম

ইমাম হাসান মুক্তি, প্রতিনিধি, নাটোর (লালপুর)
দীর্ঘদিন যাবত কোন প্রকার খেলাধুলা না হওয়ায় অবহেলায় পতিত হয়ে পড়েছে নাটোরের লালপুরের শহীদ মমতাজ উদ্দিন স্টেডিয়াম। প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে পুরো মাঠ জুড়ে কাশফুল আর ঘাসে ছেয়ে রয়েছে। রোদ আর বৃষ্টিতে ভিজে অব্যবহৃত স্টেডিয়ামের মূল গেটে ঝুলানো তালাতে মরিচা ধরে গেছে।
প্রতিবছর শরৎকাল এলে পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে যেন সাদা কাশফুলের মেলা বসে। মাঠের ভেতর-বাহিরে এক প্রান্ত থেকে গ্যালারী পর্যন্ত পুরো মাঠ জুড়ে প্রায় ছয়-সাত ফুট উচু ঘন কাশবনের সাদা ফুলে ভরে যায়। এমনকি স্টেডিয়ামের মূল নাম ফলকটিও হারিয়ে যায়।
ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা যায়, নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা সদর হতে এক কিলোমিটার দক্ষিণে বৈদ্যনাথপুর এলাকায় ২০০৬ সালে নির্মিত হয় শহীদ মমতাজ উদ্দিন স্টেডিয়াম। এটি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের আঁখচাষের ভূমিসীমার পূর্ব প্রান্তে লালপুর-বনপাড়া সড়কের পাশে অবস্থিত। বাংলাদেশের একটি উপজেলা পর্যায়ের এই স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস সমূহের কর্মসূচী, উপজেলা পর্যায়ের খেলাধুলা আয়োজিত হয়। বাংলাদেশের অন্যান্য সকল ক্রীড়া ভেন্যুর মতই এই স্টেডিয়ামটি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভুক্ত ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্বাবধায়নে রয়েছে।
২০০৪ সালে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয়ে লালপুর স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালের ২০ অক্টোবর বিএনপি সরকারের তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল স্টেডিয়ামটির উদ্বোধন করেন। তবে ২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে রাখে শহীদ মমতাজ উদ্দিন স্টেডিয়াম। তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার নতুন নামের ফলক উন্মোচন করেন।
স্টেডিয়ামটি পাঁচ একর জমির উপর নির্মিত। মাঠটি পূরোপুরি গোলাকার নয়। স্টেডিয়ামটির কংক্রিট নির্মিত পূর্নাঙ্গ গ্যালারি রয়েছে। তবে প্যাভিলিয়ন নেই।
এই স্টেডিয়ামে প্রতিবছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ, শিশু সমাবেশ, শরীরচর্চা প্রদর্শনী এবং মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ২০১২ সালে এই ভেন্যুতে শহীদ মমতাজ উদ্দিন স্মৃতি ফুটবল কাপ খেলা হয়। ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এই ভেন্যুতে ৪৭তম বাংলাদেশ জাতীয় স্কুল ও মাদরাসা গ্রীষ্মকালীন ফুটবল টুর্নামেন্ট এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর লালপুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে এই ভেন্যুতে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ (অনুর্ধ-১৭) ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। খেলা ছাড়াও যাত্রাপালা ও সার্কাসের জন্য স্টেডিয়ামটি ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন স্টেডিয়ামে কোন কার্যক্রম নেই।
রক্ষনাবেক্ষণ, পর্যাপ্ত লোকবল ও সংস্কারের অভাবে স্টেডিয়ামটি খেলাধুলার অযোগ্য হওয়ার আশংকা রয়েছে।
স্টেডিয়ামের নৈশ প্রহরী শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এই স্টেডিয়ামে কেউ আসে না যার কারনে কোন প্রকার খেলাধুলাও এখানে হয় না। নির্দিষ্ট কোন বেতন ভাতাও পাই না। তবে ঈদ-পরবে কিছু টাকা দেওয়া হয়।
স্থানীয় যুবকরা বলেন, স্টেডিয়াম সবার জন্য উন্মুক্ত না থাকার কারণে প্রতিবছর এটি কাশফুলের মাঠে পরিণত হয়। নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হলে এমনটি হতো না।
লালপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশফাকুল হোসেন রিমন বলেন, প্রতিবছর কোন না কোন খেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। করোনার কারণে খেলা হচ্ছে না। তিনি বলেন, এখানে সবশেষ ২০১৯ সালে জাতীয় দিবস ও উপজেলা কাপ খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
লালপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) শাম্মী আক্তার বলেন, স্টেডিয়াম সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নেই। ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব কোন তহবিল না থাকায় মাঠ সংস্কার করা যাচ্ছে না। তবে স্টেডিয়ামটি সংস্কারে ক্রীড়া মন্ত্রানলয়ে বরাদ্দ পেলে তা সংস্কার করে পুনরায় খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হবে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.