শুক্রবার | ২৬ জুলাই, ২০২৪ | ১১ শ্রাবণ, ১৪৩১

মগ-মুল্লুকের শেল-গুলি কি নতুন বিষফোঁড়া?

প্রফেসর . মো: ফখরুল ইসলাম:

ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিকে শেলের একটি ভাঙ্গা টুকরো আছড়ে পড়েছিল উঠোনে। কৌতুহল বশত: পাড়ার ছোট বড় সবাই দৌড়ে এসে টুকরোটি দেখা শুরু করেছিল। একটি লোহার ফ্যানের মতো টুকরো মনে করে উপস্থিত মুরুব্বির কেউ ততটা ভীত না হয়ে নানা ব্যাখ্যা দেবার পর পুলিশকে খবর দিয়েছে। কিন্তু পরদিন থেকে যা ঘটতে শুরু করেছে তাতে আতঙ্কের মাত্রা ছাড়িয়ে প্রাণভয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের নিকটে বসবাসকারী পরিবারগুলো তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দূরে কোথাও নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সেসব অধিবাসী গণমাধ্যমকে বলেছেন, জান্তা বাহিনীর অত্যাচারী মগরা তাদের মুল্লুক থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আমাদের বিজিবির হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে। নিজ দেশের বিদ্রেীদের হাতে পরাজিত হচ্ছে মগরা। স্থানীয়রা তাদেরকে এখনও মগ বলে সম্বোধন করে।

সবচেয়ে অভিনব ও অনভিপ্রেত ঘটনা শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারীর ৬, ২০২৪ তারিখ থেকে। মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে অস্ত্রসহ পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের ৩৩০ জনকে ১৫ ফেব্রুয়ারী সমুদ্রপথে দেশে ফেরত পাঠানোর দিনেও মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি-বোমার শব্দ ভেসে আসছিল। ফেব্রুয়ারীর ১৬ তরিখে টেকনাফের শহপরীর দ্বীপ ও রাতে সেন্টমার্টিন সীমান্তের ওপারের গুলি-শেল-বোমার শব্দে ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছিল আমাদের স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেন্টমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, রাতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আমাদের সীমান্তের ওপারে কয়েকটি বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল সেন্টমার্টিনের মাটি। মার্চের চার তারিখে আবারো নতুন করে গোলার শব্দ আতঙ্ক তৈরী করছে।

এর আগে সপ্তাহ যাবত মুহুর্মূহু গুলি, বোমার শব্দ, সীমান্তের পাহাড়গুলোর উপরে হেলিকপ্টারের চক্কর, মর্টার শেলের আগুনের ঝলক জনমনে চরম ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ছুটে আসা গুলি-শেলের আঘাতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একই পরিবারের কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। ভয়ে কেউ বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। তাদের টাকা, ধান-চাল, গবাদি পশুগুলোকেও অন্যত্র সারিয়ে নেয়া হয়েছিল।

বিদ্রোহী সশস্ত্র আরাকান আর্মিদের গ্রুপ ব্রাদারহুড এ্যলায়েন্সের সমন্বিত আক্রমণে টিকতে না পেরে নাস্তানাবুদ হয়ে প্রাণভয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষাকারী পুলিশরা (বিজিপি) ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়েছিল।

প্রথমদিন ৫৬ জন ঢুকে পড়লেও তিন দিন পরে তাদের সংখ্যা তিনশত ছাড়িয়ে গেছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সীমান্তরক্ষাকারী পুলিশ (বিজিপি) ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা দলে দলে আত্মসমর্পণ করে অস্ত্রসহ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লে বাংলাশে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্র করে আশ্রয় দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সহয়তা করছে। বান্দবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় সহ নিকটস্থ প্রাথমিক স্কুলগুলোতে তাদেরকে থাকতে দেয়ার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। তাদেরকে নিরস্ত্র করে টেকনাফ-২ বিজিবি-র আওতায় হেফাজতের জন্য হ্নীলায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া মিনামারের বর্ডার পুলিশদের দু’একটি ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও এর বাস্তব চিত্র অনেক বেশী। তমব্রু, ঘুমধুম, পালংখালি, উলুবুনিয়া, হোয়াইকং (৬৩ নং ক্যাম্প), ঢেকুবুনিয়া এলাকার পুরো সীমান্তু জুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে মুহুর্মূহু গুলি, বোমার শব্দ, মর্টার শেলের আগুনের ঝলক জনমনে প্রাণাতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। আতঙ্কিত মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতেও ভয় পাচ্ছে। কারণ, মর্টার শেলের আঘাত যে কোন সময় সেখানেও আছড়ে পড়তে পারে।

মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সরকার ও এ-এ বিদ্রোহী সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলোর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই অভ্যন্তরীণ যুদ্ধকে প্রথমদিকে শুধু রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তের জাতিগত সংঘাত হিসেবে মনে করা হলেও বর্তমানে মিয়ানমারের সংগে ভারতের মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যন্ড, অরুণাচল প্রভৃতি যেসকল রাজ্যের সাথে মিয়ানমারের সীমান্ত আছে সেসব সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভারত ইতোমধ্যে সেসব রাজ্যে সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদ্রোহীরা রাজধানী ইয়াঙ্গুন দখল করে নিতে পারে জন্যে জান্তা সরকার তাদের রাজধানী রক্ষায় পিপলস্ এ্যলায়েন্স গঠন করেছে। নবগঠিত পিপলস্ এ্যলায়েন্সকে অস্ত্র, খাদ্য, নগদঅর্থ সহায়তা দিচ্ছে জান্তা সরকার।

সমস্যা হলো, বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সমন্বিত আক্রমণের শিকার হয়ে দলে দলে জান্তা সরকারের সীমান্তরক্ষাকারী পুলিশ (বিজিপি) বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার পাশাপাশি বেসামরিক হাজারো মানুষ রাখাইন রাজ্যে ছেড়ে আবারো বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পরিকল্পনা শুরু করেছে। গত প্রায় ছয় বছর ধরে প্রায় ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কক্সবাজার, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প বানিয়ে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে আমাদের সরকার মহত্তে¡র পরিচয় দিলেও দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাবার পরেও সেসব রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। তাদের ভরণ পোষনের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সহযোগিতা কমতে কমতে বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়ে পড়েছে। সেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রতিনিয়ত অন্তকলহে লিপ্ত থাকছে। তারা মাদক পাচার, ভুয়া পাসপোর্ট তৈরী করে বিদেশে গিয়ে আটক হওয়া, চুরি, হাইজ্যাক, খুন-খারাবিতে লিপ্ত হয়ে যাবার ফলে আমাদের চিরায়ত আর্থ-সামাজিক কৃষ্টি ও মূল্যবোধ ব্যবস্থার উপর আঘাত শুরু হয়ে গেছে।

একদিকে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা ১২ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী অন্যদিকে আরো নতুন শরণার্থী ঢুকে পড়ার আশঙ্কা এক অজানা অশনি সংকেতের প্রেক্ষাপট তৈরী করে ফেলায় বিশ্লেষকগণ অনেকেই এদেশের ভব্যিৎ নিয়ে ঘাবড়ে যাচ্ছেন।

জান্তা সরকারের সীমান্তরক্ষাকারী পুলিশ (বিজিপি) সেদেশের বিদ্রোহীদের বড় টার্গেট। এদের সাথে বিদ্রোহী সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গ্রæপগুলোর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলাকালীণ পালিয়ে আসা তাদের শত্রুদেরকে বাংলাদেশ আশ্রয় প্রদান করায় বাংলাদেশ হঠাৎ করে কার পক্ষ নিয়েছে? নিজের ঘরের মধ্যে ঘোঘের বাসা রেখে এমন দো-টানা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের বিজিবি কর্তৃপক্ষ আগে কখনও পড়েনি বলে মনে হচ্ছে।

পালিয়ে আসা জান্তা সরকারের সীমান্তরক্ষাকারী পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরা সবাই সামরিক কৌশলে সুপ্রশিক্ষিত। ঢুকে পড়া সৈন্যদের মধ্যে ১৪ জন সামরিক গোয়েন্দা রয়েছে বলে সংবাদ হয়েছে। তাদেরকে মর্যাদার সাথে আশ্রয় দিয়ে বাহবা নিয়া গেলেও- সাধারণত: বিষধর সাপের ফার্মে তালা দিয়ে রাখলেও রাতে ঘুমানো কষ্টকর। তাই এসব প্রশিক্ষিত অনুপ্রবেশকারীদেরকে নিয়ে বেশ বিড়ম্বনা তৈরী হয়েছিল। তারা কি সহজেই মিয়ানমারে ফেরত যেতে রাজী হয়েছে? তাদের কেউ কেউ নাকি আগে থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। অনেকের ভয় যে দেশে ফেরত গেলে তাদের জন্য ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করছে।

ইতোমধ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা রিফুজি ক্যাম্পে অবস্থানরত বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যদের সাথে তাদের যোগাযোগ হওয়ায় আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের উপর আরসা-আরএসও আধিপত্যের আগুন এবং অভ্যন্তরীণ কলহ ও সংঘাত বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। আরো নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে যে, যেসব সশস্ত্র সৈন্য সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশ করেছিল তারা অনেকেই আগে থেকে আমাদের দেশের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত তালিকাবদ্ধ আরসা- আরএসও বা অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপের প্রশিক্ষিত সদস্য। তারা নতুন করে অনুপ্রবেশ করে আত্মসমর্পণ অথবা ধরা পড়ে থাকলে সেটাও একটা রহস্য। কারণ, তারা বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে কখন–কিভাবে বের হয়ে মিয়ানমারের সরকারী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল সে তথ্য কেউ জানেন না।

এছাড়া জাহাজে করে অনুপ্রবেশকারী সৈন্যদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে যেভাবে সমন্বয় করা হয়েছে তার সাথে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা আরসা-আরএসও বিদ্রোহী গ্রুপের সংযোগ থাকা নিয়ে সেগুলো আরো রহস্যময়তার জন্ম দিচ্ছে। এসব বিষয়ে সঠিক তথ্যের অভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় জনমনে নানা আশঙ্কা তৈরী হচ্ছে। জান্তা সরকার বর্তমানে নিজেদেরকে সামলাবে নাকি পালিয়ে যাওয়াদেরকে নিয়ে ভাববে? এছাড়া বাংলাদেশের কাছ থেকে সেসব ভীতু সৈন্যদেরকে ফেরত নেয়াটা কিভাবে গ্রহণ করবে?

অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্তে বিদেশী সশস্স্র সামরিক সদস্যদের অনুপ্রবেশের আটদিন পরও মানুষের আতঙ্ক কমেনি। থেমে থেমে হঠাৎ গুলি বোমার শব্দে আতঙ্কে কাঁপছে বাড়িঘর। রান্নাঘরে রান্না করার সময় গৃহবধূর মৃত্যু যদি ভিন্ দেশের গুলি-শেলের আঘাতে ভয়ে আপন বসতি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে রয়েছে আমাদের সীমান্ত এলাকার মানুষজন। নিরাপত্তার কারণে সীমান্তের ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় থেকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সীমান্ত এলাকার কৃষকরা জমিতে চাষাবাদে যেতে ভয় পাচ্ছে। এবছর পাহাড়ের শীতকালীন ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা বন্ধ হয়ে পর্যটন ভিত্তিক অর্থনীতি বিরাট লোকসানের মুখে পড়েছে। কেননা বাংলাদেশের পর্যটন বলতে মূলত পাহাড় ও সাগর সৈকতকেই বুঝায়।

এ অবস্থা খুবই অনভিপ্রেত বলে শুধু বিবৃতি দিয়ে বা জাতিসংঘে চিঠি লিখে ক্ষান্ত হলে চলবে না। কারণ, মিয়ানমারের সাথে আমাদেরে সৎপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বহু আগেই নষ্ট করেছে জান্তা সরকার। রোহিঙ্গা রিফুজি সমস্যাকে সৃষ্টি করে আমাদের আর্থ-সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্টের ভিত্তিতে বীজ বপন করেছে জান্তা সরকার। এই সমস্যাকে পুঁজি করে বৃহৎ প্রতিবেশীদেশ সহ বিশ্বের বিত্তশালী ও ভয়ংকর অস্ত্রধারী পেশীশক্তিগুলো আমাদেরকে করুণা করে চলেছে। যেটা আরো দীর্ঘদিন চলতে থাকলে আমাদের জন্য নতুন বিষফোঁড়া হয়ে বড় ভয়ংকর বিপর্যয় তৈরী হতে পারে।

রোহিঙ্গা রিফুজি প্রত্যাবাসন সমস্যা যেমন আন্তর্জাতিকভাবে পরাশক্তির নিয়ন্ত্রণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে তদ্রুপ বিদ্রেহী গোষ্ঠার আক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণভয়ে বাংলাদেশের সীমারেখা ডিঙ্গিয়ে আসা মিয়ানমারের প্রশিক্ষিত সরকারী বর্ডার পুলিশ ও সেনা সদস্যদের আমাদের আশ্রয়ে চলে আসার ঘটনাকে অতি সরলভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। সারা বিশ্বে যুদ্ধের নামে ছোট ছোট দেশগুলোর উপর যে ধরণের নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাতে আমাদেরকে নিজের পায়ে সবলভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য সদা সচেষ্ট হবার বিকল্প নেই।

 

*লেখক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন। E-mail: [email protected]

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.