ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
আকাশে আষাঢ়ে মেঘের লুকোচুরির খেলা। অসীম শুন্যে বাতাসে উড়ছে শুভ্রসাদা খন্ড মেঘের ভেলা। বিকেলের সূর্য অস্তমিত হওয়ার জানান দিচ্ছে সোনালী লাল আভা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিল আম বাগানের গাছের ডালের ফাঁক দিয়ে উকিঝুঁকি মারছে বিকেলের সূর্যকিরণ। মৃদু বাতাসে দুলছে পত্রপল্লব। হৃদয় জুড়ানো পরিবেশে চলছে কবিতা আবৃত্তি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করছেন দর্শক-শ্রোতা। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতির আষাঢ়ে মেঘের লুকোচুরিতে জমে ওঠে আবৃত্তি সন্ধ্যা।
শনিবার (২ জুলাই ২০২২) নাটোরের লালপুরের গ্রীনভ্যালী পার্ক লিমিটেডের পারিজাত চত্বরে প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজন করে সুর সাগর ললিতকলা একাডেমি ও লালপুর থিয়েটার।
প্রধান অতিথি হিসেবে দেশ বরেণ্য আবৃত্তি ও অভিনয় শিল্পী শ্রী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা বিভাগের চেয়ারম্যান ও আবৃত্তি শিল্পী অধ্যাপক রূপা চক্রবর্তীর কণ্ঠে জাদুকরী আবৃত্তিশৈলী দর্শকের মন জয় করে। শুধু তাই নয়, মনে হয় আবৃত্তি শুনতেই মোহময় প্রকৃতির মাঝে মেঘগুলো ছুটে আসে মাথার ওপর।
এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, পাবনাসহ দেশবরেণ্য ও স্থানীয় আবৃত্তি শিল্পীদের মিলন মেলায় জমে ওঠে পারিজাত চত্বর। মঞ্চে আবৃত্তির সুরে আবেগ-অনুভূতিতে বিরাজ করে শুনশান নিরবতা।
আবৃত্তি সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসাহাক আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা সুলতানা, লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনর রশিদ পাপ্পু, জিএম স্টিল এন্ড রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের সিওও আহসানুল হক শামীম প্রমুখ।
দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। বিভিন্ন কবির নানা ধরনের কবিতা দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখে।
বেলা পশ্চিম আকাশে ঢলতেই পার্কের প্রধান ফটকে জড়ো হতে থাকেন নারী, পুরুষ, তরুণ, যুবক, বয়স্ক এমন কি শিশুরা। বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয় কবিতা আবৃত্তি উপস্থাপনা।
সন্ধ্যার পর মঞ্চে ওঠেন শ্রী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, দর্শক উপস্থিতি ও পরিবেশ তাঁকে মুগ্ধ করেছে। যা বড় কোন শহরের আসরে এমনটি দেখা যায় না। তিনি আবৃত্তি করেন ফরিয়াদ, সুবোধ ও আমি কোন রিক্স নেয় না।
এরআগে রূপা চক্রবর্তী আবৃত্তি করেন আবার দেখা হবে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইসাহাক আলী আবৃত্তি করেন নির্জনে স্বপ্নভঙ্গ। ইউএনও শামীমা সুলতানা আবৃত্তি করেন শাড়ি।
বিকেল থেকে আবৃত্তি মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন, ঢাকার আবৃত্তি শিল্পী ও স্বননের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আহসান, সংগঠক ও আবৃত্তি শিল্পী শামীম আহসান, মাসকুর সাত্তার এ কল্লোল, মজুমদার বিপ্লব, মাছুম আজিজুল বাশার, মেসবাহিল রাবিন, পলি পারভীন, তাপস মজুমদার, অনির্বান চৌধুরী, প্রনব রায়, ফারুক তাহের, সাইফুল ইসলাম, পাবনার অম্লান দত্ত অভি, কুমিল্লা আবু নাসের মানিক, চট্টগ্রামের মুজাহিদুল ইসলাম, সিলেটের সুকান্ত গুপ্ত এবং স্থানীয় আবৃত্তি শিল্পীবৃন্দ।
রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত চলে আবৃত্তির আসর। দর্শকদের মনের খোরাক অপূর্ণ থেকে যায়। আরেকটু চললে ভাল লাগতো। ঘড়ির কাঁটায় সময়ের শেষ ঘন্টা ধ্বনি বেজে ওঠে। তাই দর্শকদের মনে মনে ‘শেষ হয়েও হলো না শেষ’ জপতে জপতে বাড়িতে ফিরতে হয়।
সুর সাগর ললিত কলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক রুহুল কুদ্দুস কোহেল বলেন, দর্শকদের সাঁড়া অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। আগামীতে এ ধরণের আবৃত্তি সন্ধ্যার আয়োজনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
লালপুর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মান্নান বলেন, খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন সাধারণত দেখা যায়। আবৃত্তির এ ধরনের আয়োজন এই প্রথম হলো। যা দর্শক- শ্রোতাদের মনে এক অনন্য যোগ করেছে।