নাটোর প্রতিনিধি:
‘বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী নেশায় আসক্ত হয়েছে। পরিবার থেকে শাসন করায় সে ইতিমধ্যে দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।’
বুধবার (৫ মার্চ ২০২৫) ছেলেটির বাবা (শফিকুল ইসলাম) আক্ষেপ করে বলেন, ‘বড় ছেলেটা নেশায় আসক্ত। ছোট ছেলেটাও স্কুল পড়ুয়া সমবয়সীদের সাথে ধুমপান করতে করতে এখন গাঁজায় আসক্ত হয়ে পড়েছে।’
নাটোরের লালপুরে মাদকের ভয়াল থাবায় মারাত্মক ঝুকির মুখে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কিশোর-তরুণ-যুবক এমন কি বৃদ্ধ পর্যন্ত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। নেশার টাকা যোগান দিতে পারিবারিক কোলহের পাশাপাশি চুরি, ডাকাতি, মারামারি, ছিনতাই, অবৈধ হ্যাকিং ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে।
লালপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত মাসে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে র্যাব ২টি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ১টি, লালপুর থানা পুলিশ ৬টি মামলা করেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি চামটিয়া গ্রামে মাদক বিক্রি ও সেবনকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জেরে উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার বাহাদিপুর গ্রামের মৃত যুগল সরকারের ছেলে ভ্যানচালক সুকুমার সরকার দিনের বেলায় খুন হন। এ সময় চার্জার ভ্যান ও ব্যাটারি চুরি হয়। গত ১৩ জানুয়ারি বাঘার সাজির বটতলায় ফেনসিডিলসহ ট্রাক ও মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে মারা যান ইমো হ্যাকার উপজেলার মোমিনপুর-বাকনা গ্রামের বাবর আলীর ছেলে ফয়সাল হোসেন (১৫) ও মানিক হোসেনের ছেলে নাসির উদ্দিন (২০)। গত ২১ ফেব্রুয়ারি চকনাজিরপুর গ্রামে ওয়াজ মাহফিল চলাকালে স্কুলের ছাদে মাদক সেবনে নিষেধ করায় একই গ্রামের আয়াত আলীর ছেলে আহাদ (২০) ও রফিকুল ইসলামের ছেলে সজিবকে (১৯) গুরুতর জখম করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলার গোপালপুর কলেজ মোড় এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে ও গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কায়সার আহমেদের বাড়িতে ঢুকে কয়েকজন মাদকাসক্ত জিনিসপত্র ছিনতাই করে নিয়ে যায়। গত ১ মার্চ লালপুরে খোলার মাঠে একদল কিশোরের গাঁজা সেবনের ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে স্থানীয় শালিশে ওই দুই যুবক কানধরে উঠবস করে ভবিষ্যতে এমন ধরনের কর্মকাণ্ড হবে না মর্মে গ্রামবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রায় ৬৫ ভাগ বন্ধু ধুমপানে আসক্ত। তাদের মধ্যে ২৫ ভাগ গাঁজা কিংবা অন্য নেশায় আসক্ত।
সরেজমিন উপজেলার রহিমপুর, দুড়দুড়িয়া, ভেল্লাবাড়ি, বিলমাড়িয়া, গণ্ডবিল, লালপুরসহ ছোট-বড় অধিকাংশ বাজার সংলগ্ন পরিত্যক্ত জায়গায় আমদানি নিষিদ্ধ ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা মনে করছেন, মাদক সেবন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিকতার স্খলন, অবৈধ হ্যাকিং ও অভিভাবকদের অসচেতনতার পাশাপাশি মাদকের সহজলভ্যতা। তারা মাদক নির্মূলে অভিযান চালিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান।
এ বিষয়ে লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নাজমুল হক বলেন, মাদক নির্মূলে আমাদের প্রচেষ্ট অব্যাহত আছে। সবার ঐকান্তিক সহযোগিতায় অচিরেই আমরা মাদক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে সফল হবো।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান বলেন, মাদক নির্মূলে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।