নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরের লালপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপে আক্রান্ত রোগীর উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আক্রান্ত এসব রোগী পাবনার ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) কর্মরত শ্রমিক।
রোববার (১ জুন ২০২৫) বিকেল পর্যন্ত পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও বমির উপসর্গ নিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪৮ ঘন্টায় ৮১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। খাবার ও পানিতে থাকা জীবাণু থেকে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. সুরুজ্জামান শামীম।
সরেজমিন রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালে পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে বেড সংকুলান না হওয়ায় অর্ধশত রোগীকে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি শ্রমিকরা জানান, দুপুরে খাওয়ার জন্য শ্রমিকরা সাধারণত বাড়িতে তৈরি করা খাবার নিয়ে যান। তবে ক্যান্টিন ও কারখানায় সরবরাহ করা পানি তারা পান করেন। গত ২৪ মে থেকে শ্রমিকরা পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ও বমিতে আক্রান্ত হতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। প্রথম দিকে ইপিজেড চিকিৎসা কেন্দ্র ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীরা চিকিৎসা নিলেও প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন তারা লালপুর নিজ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার চন্ডিগাছা গ্রামের মোছা. বিথী বেগম (২৬) জানান, তিনি ঈশ্বরদী ইপিজেড এর মাতসুওকা বাংলাদেশ লিমিটেডের সুইং বিভাগের একজন শ্রমিক। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার পেট ব্যথা শুরু হয়। এরপর ডায়রিয়া ও বমি শুরু হলে তিনি উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে দুইদিন যাবৎ চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলার মোহরকয়া গ্রামের বাসিন্দা ও রেনেসাঁ বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্রমিক সুমাইয়া খাতুন (৩০), অস্কর বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত নুরুল্লাপুর গ্রামের মোসা. মিতা খতুন (২২), ভিনটেক্স ডেনিম স্টুডিও লিমিটেডের (এবা গ্রুপ) মো. আশরাফুল ইসলামসহ (২২) অন্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ইপিজেডে খাবার ও পানি গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই শ্রমিকদের মধ্যে বমি, পেট ব্যথা ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। প্রথমে কয়েকজন হালকা অসুস্থতা অনুভব করায় ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম শহিদুল ইসলাম বলেন, এই ইপিজেডে ৪টি পোশাক কারখানাসহ ২৪টি কারখানা চালু রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত রয়েছি। ইপিজেড স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পানি থেকে সমস্যা হয়েছে কিনা জানার জন্য ইতিমধ্যে ইপিজেডের পানি পরীক্ষা করতে ঢাকা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের জন্য ফিল্টার পানির ব্যবস্থা থাকলেও তারা অনেক সময় সাপ্লাইয়ের পানি খেয়ে থাকেন।আপাতত শ্রমিকদের ইপিজেডে সরবরাহকৃত পানি পান করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মুনজুর রহমান বলেন, গত ৩ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। রোববার বিকেল পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘন্টায় আরো ২৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে ১০৩ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কলেরা স্যালাইনের সংকট হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে জেলা ও কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় কলেরার স্যালাইন সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছেন। হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নার্স, চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। রোগীর চাপ সামাল দিতে ছুটি বাতিল করে অতিরিক্ত নার্স ওয়ার্ডে কাজ করছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ মুক্তাদির আরেফীন বলেন, ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সজাগ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।