সোমবার | ৩০ জুন, ২০২৫ | ১৬ আষাঢ়, ১৪৩২

গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার যারা তাদের পাশে দাঁড়াবে বিএনপি-মাহাদী আমিন

নাটোর প্রতিনিধি :
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদি আমিন বলেন, গুম পরিবার ও গত ২০ বছর যারা রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদের পাশে বিএনপি দাঁড়াবে।
বুধবার (২৫ জুন ২০২৫) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত ২৬ জুন আন্তর্জাতিক দিবস পালনের জন্য মায়ের ডাক ফাউন্ডেশন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র (এইচআরডিসি) এবং ছওয়াব (এসডব্লিউএবি) আয়োজিত একটি জাতীয় পরামর্শ সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ছওয়াবের সিইও এন্ড চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামান। মায়ের ডাকের মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম আখি, গণসংহতি আন্দোলনের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য দীপক রায়, এবি পার্টির আন্তর্জাতিক ও ছায়া সরকার বিষয়ক টিমের সদস্য হাজরা মেহজাবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবাধিকার সংগঠক রেজাউর রহমান লেলিন।


দু:খ প্রকাশ করে মাহাদি আমিন বলেন, যেভাবে বিগত দিনে আপনাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল আমরা সেভাবে হয়তো দাঁড়াতে পারিনি, কিন্তু ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এসব পরিবারের পাশে বিএনপি দাঁড়াবে। আপনাদের ত্যাগের জন্যই আজকে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। ১৬ বছর আপনাদের উপর যে নিপীড়ন-নির্যাতন চলেছে তা ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণ আগামীতে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না। কারণ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ জনগণ তার কাঙ্খিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক হেফাজতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিবর্গের বিচার, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূবরণের ব্যবস্থা নিশ্চয়ই আমরা করবো।


আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যই এবি পার্টির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা শুরু থেকেই মায়ের ডাকসহ গুম পরিবারের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও তাদের ন্যায়সঙ্গত সকল সংগ্রামে অংশগ্রহণ করবো।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, প্রায় ১০ হাজারের অধিক গুম-খুনের শিকার হয়েছে ফ্যাসিবাদ হাসিনার আমলে। এখনও তাদের সন্তানরা ট্রমার মধ্যে রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি তাদেরকে কখনও ভুলে গেলে চলবে না।
মায়ের ডাকের সাধারণ সম্পাদক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, গত ১২ বছর আমার পাশে যারা ছিলো তাদের প্রত্যেকেই কাউকে না কাউকে হারিয়েছে। কেউ পিতা হারিয়েছে, কেউ স্বামী হারিয়েছে, কেউ বা সন্তান হারিয়েছে। শত বাধা উপক্ষো করে ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষুর মুখোমুখি হয়ে রাজপথে দাঁড়িয়েছিল। আর সেই প্লাটফর্মের নামেই হচ্ছে মায়ের ডাক। আমরা বিশ্বাস করি ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর যখন আমাদের কোন স্বজনরা ফিরে আসেনি তখন আমরা বেশি হতাশাগ্রস্থ হয়েছি। আমাদের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনও ঘাপটি মেরে তাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছে। তাদের এখনও আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে পারিনি। তাদেরকে আইনের আওতায় না আনা পার্যন্ত আমাদের বিশ্রাম নেই।
মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক বলেন, জাতিসংঘ নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে কনভেনশন ১৯৮৪ এর ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের সংরক্ষণ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা পুনর্বাসনের অধিকার লাভ করে। জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকল (ওপিসিএটি) অনুমোদন করতে হবে। এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা নির্যাতন ও নিষ্ঠুর অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংস্থা কর্তৃক আটক কেন্দ্রসমূহে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখে। একইসাথে, একটি জাতীয় প্রতিরোধ কাঠামো (এনপিএম) গঠন করতে হবে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর নিয়মিত নজরদারি করবে।
নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন, সাভার প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুল হুদা, গুম ও খুনের শিকার ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন মন্টুর বোন মিতু আক্তার, গুমের শিকার এরশাদ আলী লাডলার পিতা মোহাম্মদ মাহবুব আলী, নিউ মার্কেট থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বাপ্পির বোন ঝুমুর, গুমের শিকার পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি, ড্রাইভার কাওসারের মেয়ে লামিয়া আক্তার মিম, সাফা, আরিয়ান প্রমুখ।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.