শুক্রবার | ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ | ১ কার্তিক, ১৪৩২

এইচএসসিতে ৩ কলেজে পাশের হার শুন্য, মাদরাসার ফলাফল সন্তোষজনক

নাটোর প্রতিনিধি :
নাটোরের লালপুর উপজেলার ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে ধ্বস নেমেছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসিতে ১৬টি কলেজের মধ্যে তিনটি কলেজে কোনো শিক্ষার্থী পাশ করতে পারেনি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৪টি প্রতিষ্ঠানের আলিম ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৮টি কলেজের এইচএসসি (বিএমটি) পরীক্ষায় সামগ্রিকভাবে ফলাফল আশানুরূপ হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর ২০২৫) প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে লালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলায় মোট ১৮২৬ জনের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন ৭৬৯ জন আর অকৃতকার্য হয়েছেন ১০৫৭ জন। পাশের গড় হার ৪২.১১ শতাংশ, আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ২৯ জন শিক্ষার্থী। হতাশাজনকভাবে পাইকপাড়া কলেজে ৭ জন, রাধাকান্তপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ২ জন এবং মাঝগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৫ জন পরীক্ষার্থীর কেউ পাশ করেননি। পাশের হার শুন্য শতাংশ।
এদিকে গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে ৩২৪ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১৪৯ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৪৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ জন। লালপুর ডিগ্রি কলেজে ১৮১ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১০২ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৫৭ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন। ওয়ালিয়া হাকিমুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৯৮ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৫৩ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৫৪ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন। আব্দুলপুর সরকারি কলেজে ৩১৮ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৯৯ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৩২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন।
গৌরিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৯২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৪৫ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৪৯ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। গোপালপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজে ৫২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ২৫ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৪৮ শতাংশ। মোহরকয়া ডিগ্রি কলেজে ৯২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৪৪ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৪৮ শতাংশ। লালপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৯৮ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৪০ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৪১ শতাংশ।
দুড়দুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ৬২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১৯ জন পাশ করেছে। পাশের হার ৩১ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন। বিলমাড়ীয়া কলেজে ৫১ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১৩ জন পাশ করেছে। পাশের হার ২৬ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। কলসনগর কলেজে ১৮ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৪ জন পাশ করেছে, পাশের হার ২৩ শতাংশ। রামপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ২২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ৪ জন পাশ করেছে, পাশের হার ১৮ শতাংশ এবং নজরুল নগর ঘাট মোড়দাহ মডেল কলেজে ৯ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১ জন পাশ করেছে, পাশের হার ১১ শতাংশ।
উপজেলায় ৪টি মাদ্রাসা থেকে মাত্র ৫৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়েছে ৫৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন। গড় পাশের হার ৯১.৩৮ শতাংশ।
রায়পুর জাফরিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে ১১ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে শতভাগ পাশ করেছেন। জিপিএ ৫ পেয়েছেন একজন শিক্ষার্থী। এছাড়া নেংগপাড়া আলিম মাদ্রাসা থেকে একজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে একজন পাশ করায় তাদের পাশের হারও শতভাগ। বালিতিতা ইসলামপুর আশরাফুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ৩৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৩১ জন কৃতকার্য হয়েছে। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ জন। তাদের গড় পাশের হার ৮৬ শতাংশ ও ভেল্লাবাড়িয়া বাগুদেওয়ান আলিম মাদ্রাসার ১২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জন পাশ করেছেন। গড় পাশের হার ৮৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উপজেলার ৮টি কলেজের ৩৩৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হয়েছেন ১১৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষার্থী। গড় পাশের হার ৩৫.০১ শতাংশ।
মাজার শরীফ বিজনেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট উইমেন্স কলেজে ২২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১৮ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৮২ শতাংশ। মঞ্জিল পুকুর কৃষি, কারিগরি ও বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয়ে ৬৭ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ২৩ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৩৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ জন। গোপালপুর পৌর টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে ৭৩ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ২৫ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৩৫ শতাংশ। চকনাজিরপুর ভোকেশনাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটে ৪৬ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১১ জন পাশ করেছে, পাশের হার ২৪ শতাংশ। লালপুর ডিগ্রি কলেজে ৬২ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ২৩ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৩৭ শতাংশ। লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও বিএম কলেজে ৪৬ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১৫ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৩২ শতাংশ। গোপালপুর পৌর মহিলা বিএম কলেজে ১০ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ২ জন পাশ করেছে, পাশের হার ২০ শতাংশ এবং লক্ষণবাড়িয়া চৌমুহনী কলেজ ১১ জন শিক্ষার্থী মধ্যে ১ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৯ শতাংশ।
পাইকপাড়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিল্টন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজে আসেন না। শিক্ষার্থীরাও ঠিকমতো ক্লাস না করায় ফলাফলে এমন বিপর্যয় ঘটেছে।
মাঝগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আজাদুল আলম বলেন, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন চাকুরির সঙ্গে জড়িত থাকায় নিয়মিত ক্লাস করেনি। ফলে তারা কেউ পাশ করতে পারেনি।
এদিকে রাধাকান্তপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াজেদ আলী মৃধা বলেন, কোন শিক্ষার্থী কৃতকার্য না হওয়ার বিষয়টি দু:খজনক। বিষয়টি তদন্ত করে কারণ অনুসন্ধান করা হবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.