বুধবার | ৫ নভেম্বর, ২০২৫ | ২০ কার্তিক, ১৪৩২

লালপুরে বিদায় সংবর্ধনায় খাট-পালঙ্ক উপহার পেলেন শিক্ষক

নাটোর প্রতিনিধি :

বিদায় মানেই বেদনা, তবে কোনো কোনো বিদায় হয়ে ওঠে স্মরণীয়, অম্লান ও ভালোবাসায় ভরা। এমনই এক অনন্য বিদায়ের সাক্ষী হলো নাটোরের লালপুরের সালামপুর উচ্চ বিদ্যালয়। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গণিত বিষয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল ওয়াহাবের বিদায় অনুষ্ঠানটি রূপ নেয় এক আবেগঘন উৎসবে।
দীর্ঘ ৩৭ বছরের শিক্ষকতা জীবনের পর অবসর গ্রহণ করেন তিনি। প্রিয় সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই বিদায় সংবর্ধনা যেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে পরিণত করেছিল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার এক মিলনমেলায়।
প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালামের সভাপতিত্বে ও সহকারী শিক্ষক মো. খাজের আলীর সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ, একাডেমিক সুপারভাইজার সাদ আহমেদ শিবলী, শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম এবং শিক্ষার্থী সোহানা সোহা।
সংবর্ধনার এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিদায়ী শিক্ষককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তাকে সম্মাননা ক্রেস্ট, খাট-পালঙ্ক ও অন্যান্য উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। বিদ্যালয়ের সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা আবেগে আপ্লুত হয়ে তাদের প্রিয় শিক্ষককে বিদায় জানান।
শেষে ফুল ও বেলুনে সাজানো একটি প্রাইভেট কারে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন আব্দুল ওয়াহাব। বিদ্যালয় থেকে তার বাড়ি লালপুরের রায়পুর (দিলালপুর) পর্যন্ত গাড়ি বহরে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত শিক্ষার্থীর চোখে ছিল অশ্রু, আর মুখে ছিল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মিশ্র অনুভূতি।
প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, “ওয়াহাব স্যার শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। তার নিবেদন, সততা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার স্বীকৃতি স্বরূপই আমরা এমন একটি ব্যতিক্রমী বিদায়ের আয়োজন করেছি। খাট-পালঙ্ক উপহারটি তার প্রতি আমাদের চিরকৃতজ্ঞতার প্রতীক।”
সহকারী শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, “ওয়াহাব স্যার ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক। তিনি যেভাবে শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়েছেন, তা কখনো নিভে যাবে না। তাই আমরা চেয়েছি তাকে এমনভাবে বিদায় দিতে, যা তার কর্মজীবনের মহিমার সঙ্গে মানানসই হয়।”
বিদায়ী শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব কণ্ঠ ভারী করে বলেন, “এই বিদ্যালয় আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। এখানে পাওয়া ভালোবাসা ও সম্মান আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। এই বিদায় শুধু বিচ্ছেদ নয়, এটি আমার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।”
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালের ৫ মার্চ তিনি সালামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বর অবসরে যান। দায়িত্ববোধ, নিষ্ঠা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি স্নেহ দিয়ে তিনি সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।
নাটোরের লালপুর উপজেলার রায়পুর গ্রামের মৃত আ. জব্বারের মেজ ছেলে আব্দুল ওয়াহাব রায়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৮০ সালে দয়ারামপুর কে বি কে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৮২ সালে আব্দুলপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৮৫ সালে বিএসসি সম্পন্ন করেন।
আজীবন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাওয়া এই মানুষটি সংসার পত্তন করেননি। অবসরের পর তিনি ভাই ও ভাতিজাদের সঙ্গে গ্রামে থেকেই বই পড়া, ইবাদত ও গাছ লাগিয়ে জীবন কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তিনি আবেগভরে বলেন, “এখন শান্তিতে ইবাদত করব, বই পড়ব, প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকব। সবার কাছে দোয়া চাই—যেন এই ভালোবাসা নিয়েই জীবনের বাকি দিনগুলো শান্তিতে কাটাতে পারি।”

সম্পাদনায় : রাশিদুল ইসলাম রাশেদ

সাব এডিটর, প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.