বৃহস্পতিবার | ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে পারমাণবিক জ্বালানি লোডের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি:

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে ফুয়েল (পারমাণবিক জ্বালানি) লোড করার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফুয়েল লোড হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ফুয়েল লোড শুরু হলে এ বছরের শেষেই রূপপুর প্রকল্পের সূচনা (স্টার্ট আপ) হতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।

এর আগে দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফিজিক্যাল স্টার্ট আপের (জ্বালানি লোডিং) প্রস্তুতির সামগ্রিক অবস্থা নিরীক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়েরা), রাশিয়ার শিল্প ও কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তা তদারকি সংক্রান্ত সংস্থা-ভিও সেফটিসহ দেশটির অন্যান্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল গত ৭ নভেম্বর থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বিস্তৃত ও সুনির্দিষ্ট পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। বায়েরার চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন,  সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ ধরণের পরিদর্শনের চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর জ্বালানি লোডিং হতে পারে। সেই হিসেবে আগামী ডিসেম্বরের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সপ্তাহে প্রকল্পের প্রথম ইউনিটে পারমাণবিক জ্বালানি লোড করা হতে পারে। তাই চলতি বছরের শেষ নাগাদ রূপপুর প্রকল্পের সূচনা (স্টার্ট আপ) হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল) এর মানবসম্পদ, প্রকল্পে ব্যবহৃত বিভিন্ন ইক্যুইপমেন্ট, প্রকল্পের বিভিন্ন সিস্টেম ও ফ্যাসিলিটি এবং পরিচালন সংক্রান্ত বিভিন্ন ডকুমেন্ট পরিদর্শন টিম পর্যালোচনা করেছেন। এছাড়াও প্রতিনিধি দলটি কমিশনিং কার্যক্রমের অগ্রগতি, বিভিন্ন স্থাপনা, স্টার্ট আপ ও সমন্বয় প্রটোকল এবং সনদসমূহ বিচার বিশ্লেষণ করেন। প্রকল্পের ফিজিক্যাল স্টার্ট আপের বিষয়টি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ত‌দারকি কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ন করেন এনপিসিবিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাসান এবং সমন্বয় করেছেন সংস্থার প্রধান পরিদর্শক মো. ইয়ামিন আলী।

ফিজিক্যাল স্টার্ট আপ এবং জ্বালানি লোডিং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এই পর্যায়ে রিয়্যাক্টরে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক জ্বালালি লোড করার পর পাওয়ার স্টার্ট আপের কার্যক্রম শুরু হয়। যার অধীনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন সিস্টেম পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সীমিত মাত্রায় রিয়্যাক্টরে পারমাণবিক বিক্রিয়ার সূচনা করা হয়।

এনপিসিবিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাসান জানান, এনপিসিবিএল ইতোমধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরিদর্শন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আইএইএ পরিচালিত দুই সপ্তাহব্যাপী পরীক্ষামূলক প্রি-ওসার্ট মিশন ও ৩ সপ্তাহব্যাপী প্রি-ওসার্ট মিশন, সর্বশেষ দুই সপ্তাহব্যাপী বায়েরা, ভিও সেফটি এবং রাশান রেগুলেটরি সংস্থা ‘রস্টেকনাদজর’ পরিচালিত যৌথ পরিদর্শন। এছাড়াও এনপিসিবিএল এবং রসএনার্গোএটম নিয়মিতভাবে তাদের সেলফ এসেসমেন্ট বা স্ব-মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং সেফগার্ডকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বায়েরা রূপপুর প্রকল্পের ফিজিক্যাল স্টার্ট আপ প্রস্তুতি যাচাই করেছে। এ সময়কালে তারা এনপিসিবিএল এর বিভিন্ন মন্তব্য ও সুপারিশ বিবেচনা করে কার্যকর সমাধানেও কাজ করছে।

পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ দলটি প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জানিয়ে ড. হাসান আরও বলেন, বিশেষজ্ঞ দল রূপপুর প্রকল্পের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা আরও উন্নত করার জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছেন। এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ বর্তমানে এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করছে। কার্য-সম্পাদনের পর শীঘ্রই একটি প্রতিবেদন বায়েরা এর কাছে পাঠানো হবে। প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে সন্তোষজনক মনে হলে বায়েরা ফিজিক্যাল স্টার্ট আপ এবং প্রথমবারের মতো পারমাণবিক জ্বালানি লোডিং এর জন্য অনুমোদন ও লাইসেন্স দেবে।

বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এর চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং সেফগার্ড ফোকাস রেখে ফিজিক্যাল স্টার্ট আপ রেডিনেস ইন্সপেকশন সম্পন্ন করেছে। সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে স্টার্ট আপ বা ফুয়েল লোডিং এর জন্য রাশিয়ার রেগুলেটরি অথরিটি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার সুপারিশ প্রয়োজন হয়। সুপারিশ যথাযথ হলে বায়েরা ফুয়েল লোডিং এর অনুমতি দিবে।

রূপপুর প্রকল্পের জ্বালানি লোডিং এর জন্য জেনারেল ডিজাইনার (Rosatom Engineering Division), রিয়্যাক্টর প্লান্ট ডিজাইনার (Gidro Press), রাশিয়ার ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টার ‘কুরচাতভ ইন্সটিটিউট’ এবং বায়েরা এর অনুমোদন ছাড়াও ভিও সেফটি’র এসেসমেন্ট প্রতিবেদন জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ।

স্বত্ব: নিবন্ধনকৃত @ প্রাপ্তিপ্রসঙ্গ.কম (২০১৬-২০২৩)
Developed by- .::SHUMANBD::.