
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নাটোরের লালপুরে ধারাবাহিক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতা। সরকারি অফিস থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট ও গ্রামীণ ঘরবাড়ি সবর্ত্র চোরচক্রের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে চোর শনাক্তে তথ্যদাতাদের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) মাইকিং করতে বাধ্য হয়েছেন এলাকাবাসী।
সূত্রমতে, শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে উপজেলা ভূমি অফিসের জানালা ভেঙে দুটি কম্পিউটারের মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি করে সংঘবদ্ধ চোরচক্র। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবীর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জুলহাজ হোসেন সৌরভ জানান, “শুক্রবার জুমা নামাজের পূর্ব মুহূর্তে এ ঘটনা ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যায় বিষয়টি নজরে আসার পর রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় কম্পিউটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যচুরির সম্ভাবনা নেই।
এদিকে একই দিন (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত আফানের ছেলে জালাল (৪০) ও আলাল (৩৫), মৃত ফেলুর ছেলে আয়নাল (৪৫), মৃত সেকেন্ডারের ছেলে সাগর (৪০) ও স্বাধীন (৩০) এবং মতিউর মোল্লার ছেলে মাইদুল ইসলামের (৪২) বাড়িতে চুরির চেষ্টা চালায় চোরচক্রের সদস্যরা। তবে অধিকাংশ বাড়ির লোকজন জেগে ওঠায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কিন্তু রক্ষা হয়নি একই গ্রামের মৃত বারিক সরকারের ছেলে ঝন্টু সরকারের। সেদিন রাতে তার বাড়ি থেকে চার্জার ভ্যান চুরি করে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। এলাকাবাসী জানান, গত ছয় মাসে এই গ্রাম থেকে সাতটি ভ্যান চুরি হয়েছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন—জালাল, শাহজাহান, সাইফুল, আলাল, আ. রহিম ও সাগর। তারা সবাই ভ্যান চুরির ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া ৩ ডিসেম্বর মঞ্জিলপুকুর এলাকায় সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নানকে ছুরিকাঘাত করে তার মূলধন ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ১১ নভেম্বর লালপুর থানার গ্যারেজ থেকে থানায় কর্মরত বাবুর্চি মো. আমিরুল ইসলাম পারভেজের মোটরসাইকেল চুরি ও ১০ নভেম্বর লালপুর হলমার্কেট এলাকায় এক নারীর স্বর্ণের চেইন ছিনতাই হয়।
এ ছাড়া গত সাত মাসে উপজেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ৩৪টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ২৬ লাখ টাকা।
ক্রমাগত এসব ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ৬ ডিসেম্বর বিকালে এলাকাবাসী মাইকিং করে চোর শনাক্তে তথ্যদাতাদের জন্য আর্থিক ৫ হাজার পুরস্কার ঘোষণা করেন। ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি করেও সেভাবে ফল মিলছে না।
ইউএনও জুলহাজ হোসেন সৌরভ বলেন, “চুরি প্রতিরোধে পুলিশ, গ্রাম পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমেও সচেতনতা বৃদ্ধির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
লালপুর থানার ওসি (তদন্ত) এস. এম. রিয়াজুল হাসান জানান, “থানা গ্যারেজ থেকে চুরি হওয়া মোটরসাইকেল ও রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে চুরি হওয়া পূর্বের একটি ভ্যান ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া চুরি রোধে নৈশ টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি চোরচক্রকে ধরতে এবং চুরি হওয়া বাকি মালামাল উদ্ধারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।”
নিরাপত্তাহীনতার এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অনুরোধ- চোরচক্র শনাক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক এবং লালপুরকে পুনরায় নিরাপদ করে তোলা হোক।
সম্পাদনা : রাশিদুল ইসলাম রাশেদ /উপসম্পাদক /প্রাপ্তি প্রসঙ্গ/০৭-০২